বন্যায় তীব্র কষ্টে মানুষ, বেড়ে চলেছে নৌকার ভাড়া
বাংলাদেশ

বন্যায় তীব্র কষ্টে মানুষ, বেড়ে চলেছে নৌকার ভাড়া

‘আগেও বর্ষায় অনেক বৃষ্টি হয়েছিল, তখন তো এ পরিমাণ পানি দেখিনি। বন্যা হয়নি। ঘরবাড়ি ডুবে যায়নি। এবার এমন হয়েছে কেন?’ এমনটাই বলেছেন ৬৫ বছর বয়সী জামাল উদ্দিন। তিনি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব ফাজিলপুর এলাকার মহুরি ব্রিজ সংলগ্ন সুলতান হাজীর বাড়ির বাসিন্দা।

শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকালে ফেনী মুহুরি ব্রিজ সংলগ্ন সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলেছেন জামাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে, ছেলের স্ত্রীসহ সাত জনের সংসার। চারটি গরু ছিল। সেগুলো পানিতে ভাসিয়ে তীরে নিয়ে এসেছি। এখন মাঠে রেখেছি। স্ত্রী-সন্তানদের পাশের একটি পাকা মাদ্রাসায় রেখে দিয়েছি। ওই মাদ্রাসায় আমার পরিবারের মতো কমপক্ষে ৪০০ নারী-পুরুষ আশ্রয় নিয়েছেন।’

জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে আমার ঘরে পানি প্রবেশ করে। দেখতে দেখতে পানি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ঘরের ভেতর কোমর সমান পানি জমেছে। প্রথমে জিনিসপত্র উঁচু করে থাকার চেষ্টা করেছি। এরপরও পানির কারণে জীবন বাঁচাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বের হয়ে যেতে হয়েছে। আমার ঘরে ফ্রিজ, কাপড়-ছোপড় এবং অন্য সব জিনিসপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমার ঘরের টিনের চালটি দেখা যাচ্ছে। বাকিটা ডুবে আছি। আমি গত ৪ থেকে ৫ দিন ধরে মাঠে থাকা একটি সিএনজি অটোরিকশার ওপর বসে রাতে ঘুমাচ্ছি। কখন পানি কমবে বাড়ি যাবো তার অপেক্ষায় আছি।’

এদিকে, ফেনীতে গত কয়েকদিনের তুলনায় পানি কিছুটা কমে আসছে। তবে এখনও পানির নিচে বহু পরিবার। এখনও ডুবে আছে রাস্তা-ঘাটসহ স্থাপনা।

চট্টগ্রাম থেকে ফেনীর বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাওয়া রাউজান উপজেলার বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সাকিব উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, সোনাগাজীসহ বেশিরভাগ উপজেলা পানির নিচে তলিয়ে যায়। আমাদের টিম বুধবার ত্রাণ নিয়ে ফেনীতে এসেছি। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম থেকে আমাদের বিভিন্ন টিম প্রতিদিন ত্রাণ নিয়ে আসছে। আমরা প্রথম দিন সঙ্গে এনেছি দুটি ইঞ্জিনচালিত বোটও। এসব বোটের সাহায্যে আটকে পড়া অনেক বাসিন্দাকে আমরা উদ্ধার করে তীরে এনেছি। এখনও রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি ডুবে আছে।’

বন্যায় তীব্র কষ্টে মানুষ, বেড়ে চলেছে নৌকার ভাড়া

সাকিব আরও বলেন, ‘প্রথমদিন এখানকার মানুষের অবস্থা দেখে আমরা আতঙ্কিত ছিলাম। ভেবেছিলাম, অনেকগুলো প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে। কিন্তু মানুষ সারা দেশ থেকে বন্যার্তদের সাহায্যে যেভাবে এগিয়ে এসেছে সে কারণে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে ফেনীর বাসিন্দারা।’

চট্টগ্রামের আকবর শাহ এলাকার বাসিন্দা মিনহাজুল ইসলাম  বলেন, শনিবার সকালে এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং পানি নিয়ে একটি টিম ফেনীতে আসি। ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র এবং বহুতল ভবনে আটকে পড়া বাসিন্দাদেরকে আমরা এসব খাবার দিয়ে এসেছি। এখানকার মানুষ খুবই মানবেতর জীবন-যাপন করছে।’

বন্যায় তীব্র কষ্টে মানুষ, বেড়ে চলেছে নৌকার ভাড়া

নজরুল ইসলাম নামে এক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘এখন যারা আশ্রয়কেন্দ্রে, বহুতল ভবন এবং ঘরের ছাদে আশ্রয় নিয়েছে তারা কেউ তীরে আসতে চান না। তারা ওইখানে থেকে ত্রাণ সহায়তা চান। শুকনো খাবার যাচ্ছে। তবে যে পরিমাণ পানি তাদের প্রয়োজন ততটুকু পাচ্ছেন না বলে অনেকেই জানিয়েছেন। এখানে শুদ্ধ পানির অভাবটাই বেশি।’

শনিবার সকালে মুহুরি ব্রিজ সংলগ্ন থাকা বালুর মহাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এখানে বেশ কয়েকটি স্থানীয়দের ইঞ্জিন বোট থাকলেও তারা বেশি টাকা চাচ্ছে।

দূর-দূরান্ত থেকে ত্রাণ নিয়ে আসা কয়েকজন জানান, শুক্রবার পর্যন্ত দৈনিক ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় নৌকা ভাড়া পাওয়া গেছে। এখন দৈনিক ভাড়া ১২ হাজার টাকার বেশি চাচ্ছে। এখানকার নৌকা চালক-মালিকরা সিন্ডিকেট করেছে।

ফেনীর মুহুরি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় শনিবার সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, একের পর এক ত্রাণ বোঝাই ট্রাক-পিকআপ ঢুকছে। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এসব ত্রাণ আনা হচ্ছে। কোনও কোনও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান খাবার রান্না করে বন্যায় আটকে পড়াদের পৌঁছে দিতে দেখা গেছে। ফেনীর লালপোল থেকে বিশাল অংশ পানির নিচে। সড়কের পাশে থাকা অনেক ঘরবাড়ি স্থাপনা এখনও পানির নিচে। সড়কে আটক পড়েছে কমপক্ষে আট হাজার পণ্য বোঝাই গাড়ি। সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর টিমও ফেনীতে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধার এবং ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

Source link

Related posts

বহাল তবিয়তে প্রধান শিক্ষক, এখনও বিদ্যালয়ের মাঠে বসে পশুর হাট

News Desk

সরকার নির্বাচনি ব্যবস্থাকে তামাশার বস্তুতে পরিণত করেছে: জোনায়েদ সাকি

News Desk

‘শ্রমিক ও কৃষকের অধিকারের জন্য দাঁড়াতে হবে’

News Desk

Leave a Comment