চট্টগ্রাম বিভাগের চার জেলায় বন্যায় রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি এবং ফসলের পাশাপাশি গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চার জেলায় চার হাজার ১০৫টি গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি অন্তত দুই লক্ষাধিক মুরগির মৃত্যু হয়েছে। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গবাদিপশুর খাদ্য, খড়, ঘাস এবং খামার। সবমিলিয়ে এসবের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪৯ কোটি ৭৪ লাখ ৪৯ হাজার ৭৮৫ টাকা।
রবিবার (১৩ আগস্ট) রাতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতরের পরিচালক ডা. এ কে এম হুমায়ুন কবির। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্প্রতি বন্যায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটির অনেক খামার ডুবে গেছে। মারা গেছে বহু গবাদিপশু এবং দুই লক্ষাধিক হাঁস-মুরগি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আসবাবপত্র, খড়, ঘাস এবং পশুপাখির খাদ্য। চার জেলার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে এনেছি আমরা। ইতোমধ্যে এই প্রতিবেদন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
চট্টগ্রাম
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, বন্যায় চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলার ৭১টি ইউনিয়নের ১৮৯টি খামারে দুই হাজার ৮৯০টি গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; যার মূল্য ২২ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৭৭টি হাঁস-মুরগির খামার; যার মধ্যে পাঁচ লাখ ১৪ হাজার ৭৫৪টি হাঁস-মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে এক কোটি ৯০ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮৫ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ১০৩ টন পশুপাখির খাদ্য নষ্ট হয়েছে; যার মূল্য ছয় কোটি ১৬ লাখ ২ হাজার টাকা। ৭১ টন খড় নষ্ট হয়েছে; যার মূল্য ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। ২৯১ টন ক্ষতিগ্রস্ত ঘাসের দাম ২৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এক লাখ ১৯ হাজার ৩৩টি মুরগি ও ২০টি হাঁস মারা গেছে; যার মূল্য চার কোটি ১২ লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা। সবমিলিয়ে জেলায় ২৯ কোটি ৩০ লাখ ৯০ হাজার ১৮৫ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
কক্সবাজার
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের তিন উপজেলার ৩০ ইউনিয়নে ১৩৪টি গবাদিপশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৫০০টি গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়; যার মূল্য সাত কোটি ৫০ লাখ টাকা। ১০২টি খামারে ৬৮ হাজার ৫৭৬টি মুরগি ও ৩১২টি হাঁস মারা গেছে। পাশাপাশি এক লাখ ৭১ হাজার ৬১০টি হাঁস-মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চার কোটি ৫৯ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ টাকা।
বন্যায় এই জেলায় ১২ টন পশুপাখির খাদ্য নষ্ট হয়েছে; যার মূল্য ১২ লাখ টাকা। এক হাজার ১১০ টন খড় নষ্ট হয়েছে; যার মূল্য এক কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নষ্ট হয়েছে এক হাজার ২৯৬ টন ঘাস; যার মূল্য এক কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এক কোটি ৭২ লাখ ৯৫ হাজার টাকার পশুপাখি মারা গেছে। সবমিলিয়ে এই জেলায় ১৬ কোটি ৮৫ লাখ ৪২ হাজার ৬০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বান্দরবান
বান্দরবান জেলার সাত উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে ৩৮টি খামারের ৪৫০টি গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; যার মূল্য ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। ১৩টি হাঁস-মুরগির খামারে ১৫ হাজার ২০০টি হাঁস-মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; যার মূল্য ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পশুপাখির ১০ টন দানাদার খাদ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ছয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ২৪ টন খড় নষ্ট হয়েছে; যার মূল্য তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৪০ টন ঘাস নষ্ট হয়ে চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ২৫টি গরু, ৪২টি ছাগল, দুটি ভেড়া, ৯ হাজার ৯০০ মুরগি ও ১২০টি হাঁস মারা গেছে; যার মূল্য ৬৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে জেলায় দুই কোটি ২৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রাঙামাটি
এই জেলার দুই উপজেলার ১২ ইউনিয়নের ২২টি খামারে ২৬৫টি গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; যার মূল্য ৪৪ লাখ টাকা। ১৮টি খামারের ১২ হাজার হাঁস-মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; যার মূল্য ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকা। পশুপাখির খাদ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই টন; যার মূল্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা। ১০ টন খড় নষ্ট হয়েছে; যার মূল্য এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১৫ টন ঘাস নষ্ট হয়েছে; যার মূল্য এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১০ হাজার টাকার পশুপাখি মারা গেছে। সবমিলিয়ে এক কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।