রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে প্লাবিত হওয়ায় জেলার ২৪টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে জেলার কয়েকটি উপজেলা। পানিতে তলিয়ে আছে বসতবাড়ি সড়ক ও বিদ্যালয়। আবার অনেকে আশ্রয় নেন নিকটতম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শুধুমাত্র লংগদু উপজেলারই ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে অভিভাবকরা রয়েছেন দুচিন্তায়।
লংগদু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, টানা ভারী বৃষ্টিপাতে বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় ও বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় লংগদু উপজেলায় ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ১৩টি, বন্যাকবলিত ৩টি ও রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকতে না পারায় চারটি সহ মোট ২০টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যালয়গুলো হলো- আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় ঝর্ণাটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফোরেরমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাইবোনছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বগাচতর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইনীমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঠেকাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাইল্যাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুলশাখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাসান্যাদম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘনমোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এ ছাড়া বন্যায় প্লাবিত হয়ে রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উল্টাছড়ি-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ক্রমাগত হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তা ও চারপাশ ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থী আসতে না পারায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাসান্যাদম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জারুল বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘনমোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বন্যাকবলিত ঝর্ণাটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আফসানা শারমিন বলেন, বৃষ্টি হলেই স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা ডুবে যায়। আর এখন স্কুলেও পানি ঢুকে গেছে। ক্লাসে বসা সম্ভব না। তাই স্যাররা স্কুল বন্ধ দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, প্রতি বছরই অতিবৃষ্টির ফলে কমবেশি কিছুদিন প্লাবিত হয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ থাকে। এতে করে বাচ্চাদের জ্ঞানার্জনে ব্যাঘাত ঘটছে। তাই আমরা চাই, সরকার এর জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।
মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন জানান, টানা বৃষ্টির ফলে বিদ্যালয়ের মাঠ তলিয়ে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে পানি চলে এসেছে। এতে ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। অভিভাবকসহ সবাই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরামর্শে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
লংগদু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এম কে ইমাম উদ্দীন বলেন, কিছু বিদ্যালয় বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার, আবার কিছু বিদ্যালয় বন্যাকবলিত ও কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে না পারাসহ সবমিলিয়ে উপজেলার ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হৃষীকেশ শীল বলেন, জেলার ৪ উপজেলায় ২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার ও বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে আসতে না পারার কারণে ক্লাস স্থগিত রয়েছে। এর মধ্যে লংগদুতে ২০টি, বাঘাইছড়িতে ২টি, বরকলে ১টি ও জুড়াছড়িতে ১টি। তবে বিদ্যালয়ের ক্ষতিগ্রস্তের পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, উপজেলায় ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল ও নুরানি, হেফজখানা মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।