বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের হাওরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলপনা আঁকা হয়েছে। রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আনুষ্ঠানিকভাবে এই আলপনা উদ্বোধন করেন। পরে সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষে জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
রঙ-তুলি হাতে একদল শিল্পীর ছোটাছুটি। এদের কেউ একমনে তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তোলেন সড়ক, কেউবা দিলেন নির্দেশনা। দেখতে দেখতে সড়কটি ঢেকে যায় আলপনায়। আর তা দেখতে ভিড় জমিয়েছেন হাওরের মানুষ।
এবারের বর্ষবরণে দেশজুড়ে বৈশাখের মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিতে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থেকে অষ্টগ্রাম পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অলওয়েদার সড়কে বাঙালি ঐতিহ্যের এ আলপনা আঁকা হয়। গত শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৩টায় নাট্য ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর আলপনা আঁকার কাজ উদ্বোধন করেন। দেশের ৬৫০ জন চারুকলা শিক্ষার্থী এ আলপনা আঁকার কাজ করেন।
আজ সকাল ১০টায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক উদ্বোধন করলে সেখানে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আলপনা আঁকা সড়কটি জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিমন্ত্রী নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে আলপনায় রাঙানো পুরো সড়কটি ঘুরে দেখেন।
উদ্বোধনের পর পলক সবার উদ্দেশে বলেন, হাওর এমনিতেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এবার ১৪ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যে আলপনা করা হয়েছে এর জন্য হাওরের সৌন্দর্য আরও কয়েক গুণ বেড়েছে। আমাদের আয়োজনটি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম ওঠাতে যাচ্ছে। এতে দেশের পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করবে। এটি একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অংশ।
মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান জানান, এই আলপনার হাত ধরে হাওরে পর্যটন খাত আরও বিকশিত হবে। এই আলপনাটি হতে যাচ্ছে বর্ষবরণ উৎসবে বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা।
উৎসবের রঙে হোক বাংলামি- এই স্লোগানে ‘আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১’ নামে এটির যৌথ আয়োজন করেছে এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড, বাংলালিংক কমিউনিকেশনস লিমিটেড ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড।
মিঠামইনের অলওয়েদার সড়কে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন রঙের রাঙানো পুরো সড়ক। সেখানে শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ আলপনা দেখতে ভিড় করছেন। এর মধ্যে প্রাণখোলা বৈশাখের উৎসব। দুপুরের রোদেও অনেকেই সেখানে সেলফি তুলতে দেখা গেছে।
কটিয়াদী থেকে কলেজছাত্র আরিফুল ইসলাম বন্ধুদের নিয়ে আলপনা দেখতে এসেছেন। দীর্ঘ আলপনা দেখে তারা উচ্ছ্বসিত। আরিফ বলেন, হাওর এমনিতেই সুন্দর। হাওরের সবুজের মাঝে বর্ণিল আলপনায় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই আলপনা হাওরের রূপ যেন আরও ফুটে উঠেছে। এটি স্বচক্ষে না দেখলে বর্ণনা করা কঠিন।
কিশোরগঞ্জ সদরের তসলিমা আক্তার স্বামী সন্তান নিয়ে দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, আলপনা বাঙালি সংস্কৃতির একটি অংশ। হাওরে এটি যেন আরও সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এটি দেখার সুযোগ পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুর রহমানসহ গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন।