Image default
বাংলাদেশ

বসতভিটা রক্ষায় সিসি ক্যামরা বসিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি রওশনের

কক্সবাজারের মহেশখালীতে নিজের বসতভিটার জমি রক্ষায় সিসি ক্যামরা বসিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি রওশন আলীর। রাতের আঁধারে স্থানীয় প্রভাবশালী ও ভূমিগ্রাসী চক্র বসতবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে ভীতি সৃষ্টি করে। আকস্মিক ঘর ভেঙে দেওয়ায় কোনও উপায় না পেয়ে ত্রিপল টাঙিয়ে খোলা আকাশের নিচে বস করতে হচ্ছে রওশন আলীর পরিবারের।

এ নিয়ে মহেশখালী থানায় রওশন আলী বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেছেন রওশন আলী। মামলাটি তদন্ত করে কক্সবাজার পিবিআইকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কক্সবাজারের মহেশখালী পৌরসভার উত্তর ঘোনারপাড়া গ্রামের হাজী মিয়া হোসনের ছেলে রওশন আলীর বসতবাড়ি দখলে নিতে মহেশখালী গোরকঘাটা সিকদার পাড়া এলাকার হাশেম সিকদারের ছেলে কায়সার সিকদারের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি দল হামলা চালায়। রাতের আঁধারে অস্ত্র, দা, কিরিচ নিয়ে রওশন আলীর মালিকানাধীন বসতবাড়ি ও ভিটায় অবৈধভাবে দখলের উদ্দেশে ভাঙচুর করে তারা। এ সময় হামলাকারীরা একাধিক ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে ত্রাস সৃষ্টি মাধ্যেমে রওশন আলীর স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। অস্ত্রধারীরা বসত ভিটার চারপাশে স্থাপিত সিসি ক্যামেরা ও এনভিআর, সুইসসহ সব সরঞ্জাম লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় রওশন আলীর স্ত্রী রহিমা আক্তার বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলে হামলাকারীরা রহিমা আক্তার, তার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা,ফুফু বেগম খাতুন ও ভগ্নিপতি আব্দুল আজিজকে মারধর করে। ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে লুঠপাট করে মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।

জানা যায়,ভুক্তভোগী রওশন আলীর ৯৯৯-এর কলে থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করে। এলাকাবাসী এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে মহেশখালী হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ওই ঘটনায় জমির মালিক রওশন আলী বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় একটি এজাহার দায়ের করলেও মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ। এতে নিরাপত্তাহীনতায় থাকা রওশন আলীর পরিবার নিরুপায় হয়ে কায়সার সিকদারকে প্রধান আসমি করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের বিরুদ্ধে মহেশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের বিচারক বাদী পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনানির শেষে ঘটনাটি আমলে নিয়ে পিবিআই, কক্সবাজারকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় মোহাম্মদ হোসেন ও আব্দুল হাসেম জানান, জমিটি রওশন আলীর। দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন তিনি। স্থানীয় নজু মিয়ার ছেলে আব্দুল আজিজের সঙ্গে জমি নিয়ে রওশন আলীর বিরোধের কথা শোনা গেলেও কায়সার সিকদারের কোনও স্বত্ব নেই। কায়সার সিকদার তার বাহিনী নিয়ে জমি দখলের চুক্তি করে আব্দুল আজিজের মেয়ে ওয়ারিশ নামধারী মাবিয়ার সঙ্গে। এ কারণে কায়সার সিকদার দখলবাজ হিসাবে ভাড়ায় হামলা করে রওশন আলীর বসতভিটায়। রাতে একাধিক গুলিবর্ষণের শব্দে এলাকাবাসী মধ্যে আতঙ্কা সৃষ্টি হয়।’

এর আগে ওই ঘটনা মীমাংসার জন্য গঠিত ৪ জন স্থানীয় সালিশকারদের মধ্যে একজন গোরকঘাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়াম্যান শামশুল আলম। তিনি জানান, মহেশখালী পৌর মেয়র মকছুদ মিয়ার অনুরোধে আমরা ঘটনাস্থলে যায় এবং জমিটির কাগজপত্র পর্যালোচনা করি। এতে দেখা যায়, জমিটির মালিক পূর্বে বিক্রি করে দেওয়ায় ওয়ারিশরা কোন অংশিদার থাকে না। এ কারণে জমিটির দখলস্বত্ব ও জমির মালিকানা রওশন আলী হাসানের রয়েছে। সেখানে অভিযুক্ত কায়সার সিকদার ও তার পক্ষের কোনও জমি নেই। কায়সার সিকদার একটি বাহিনী গঠন করে জমিতে রাতের আঁধারে প্রবেশ করে এবং গোরকঘাটা বাজারে রওশন আলীর পক্ষের লোকজনের ওপর দফায় দফায় হামলা করে।’

জমির ওয়ারিশ নামধারী মাবিয়া জানান, এটি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি। এ জমি আমাদের। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিচার চলছে। কিন্তু, কারও বিচার মানছেন না রওশন আলী। আমরা কোনোভাবে তার বসতবাড়ি হামলা করিনি। একটি মিথ্যা মামলা করছে রওশন আলী।’

কায়সার সিকদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘রওশন আলীর বসতবাড়িতে আমি কেন হামলা করবো? এখানে কি আমার কোনও স্বত্ব আছে? আমি বিরোধপূর্ণ জমিটির স্থানীয় সালিশকারদের একজন। রওশন আলী কারও বিচার মানে না। থানায় নিজে অভিযোগ করে হাজির হননি। আবার পৌর মেয়র মকছুদ মিয়ার কাছেও অভিযোগ করে দুটি স্ট্যাম্প সই করে হাজির হচ্ছে না। বরং আদালতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। এছাড়াও স্থানীয় তহসিল অফিসেও এ জমিটির ব্যাপারে ভূমি অফিসের তদন্ত চলছে।’

মহেশখালী ঘোরকঘাটার তহসিলদার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘জমিটি ভূমি অফিস থেকে আমার বরাবরে পাঠানোর পর পরিমাপ করে সার্ভেয়ার একটি প্রতিবেদন উপজেলা ভূমি অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে কী রয়েছে আমার জানা নেই।’

মহেশখালী থানার ওসি মো. আব্দুল হাই জানান, থানা মামলা না নেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়। এ রকম যদি কোনও ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে অবশ্যই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। রওশন আলীর বিষয়টি এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। খোঁজ নিতে হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে মহেশখালী পৌর মেয়র মকছুদ মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

Source link

Related posts

সুদহার বাড়ালে কি মূল্যস্ফীতি কমবে

News Desk

মেহেরপুরে নৌকার কর্মীদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ২৫

News Desk

বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে এ পর্যন্ত টোল আদায় ৬ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা

News Desk

Leave a Comment