ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক অভিযানে দেশে প্রথমবারের মতো ভয়াবহ মাদক ‘এলএসডি’ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড নামে মাদক উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন, ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম। তিনি জানান, ডিবি রমনা বিভাগ এক অভিযানে প্রথমবার দেশে এলএসডি ড্রাগ উদ্ধার করেছে।
ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানিয়েছেন, আজ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নতুন এ মাদক উদ্ধার, অভিযান ও অভিযুক্তদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
এলএসডি কী?
লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথ্যালামাইড বা এলএসডি অত্যন্ত দামি এক ধরনের তরল মাদক। সাধারণত ব্লটিং পেপারের ওপরে এই মাদক ফেলে সেই কাগজ শুঁকে নেশা করে মাদকাসক্তরা। এলএসডি মাখা এক-একটি ছোট ছোট টুকরো ব্লটিং পেপারের দাম কয়েক হাজার টাকা।
এলএসডি প্রতিকূল মনস্তত্ত্ব প্রতিক্রিয়া যেমন উদ্বেগ, প্যারানয়া, এবং বিভ্রম ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এটি অক্সিজেন, অতিবেগুনী রশ্মি, এবং ক্লোরিন সংবেদনশীল। যদিও আলো, আদ্রতা এবং স্বল্প তাপমাত্রা থেকে দূরবর্তী স্থানে এটি কয়েক বছর ধরে সংরক্ষিত থাকতে পারে। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি গন্ধহীন এবং পরিষ্কার বা সাদা রঙের হয়।
এলএসডি ব্যবহারের কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ-
উদ্বেগ বা প্যারানাইয়া, উদ্ভট মন্তব্য, আবেগ, বিশৃঙ্খলা, ফ্লাশড স্কিন, হ্যালুসিনেশন, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, প্যারাফেরনালিয়া (ট্যাবলেট, ব্লটার পেপার, চিনির কিউব বা জেলটিন), ক্ষুধা ও অসংলগ্ন বক্তব্য। এলএসডি ওভারডোজের লক্ষণগুলির মধ্যে আতঙ্কের আক্রমণ, সাইকোসিস, খিঁচুনি এবং বিভ্রান্তি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এলএসডির আবিষ্কার ও বিজ্ঞানীদের ভাষ্য-
১৯৩৮ সালে সুইস রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান প্যারাসাইটিক ফাঙ্গাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এলএসডি আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের প্রথমদিকে এলএসডি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হতো। তবে ওষুধটি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে বলে একে নিষিদ্ধ করা হয়।
বিজ্ঞানীরা জানান, সাধারণত এলএসডি নেওয়ার পর একজন মানুষ চোখ বন্ধ করেও দেখতে পায়। তার দেখা এসব দৃশ্য সবসময় বাইরের পৃথিবী বা স্মৃতি থেকে আসে না বরং তাদের কল্পনাশক্তি অনেক বেড়ে যায়। এলএসডির প্রভাবে মস্তিষ্কের অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এলএসডি নেওয়ার পর প্রকৃতি ও বাইরের জগতের সঙ্গে এমন এক সম্পর্ক অনুভূত হয় যাকে অনেকসময় ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক রূপ দেওয়া হয়ে থাকে। এই মাদকের প্রভাব কেটে গেলেও ওই রকম অনুভূতি থেকে যেতে পারে।
তারা বলেন, এলএসডি ব্যবহার করলে মানুষের স্মৃতির ভাণ্ডার খুলে যায়। নেশার চূড়ান্ত পর্যায়ে কেউ কেউ মাতৃগর্ভের স্মৃতিও মনে করতে পারেন। তবে সে সব স্মৃতির ভার অধিকাংশ মানুষই সহ্য করতে পারেন না। ফলে মস্তিষ্ক বিকৃতির প্রবল সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া অধিকাংশ মাদকগ্রহণকারীই স্মৃতির চূড়ান্ত স্তরে প্রবেশের আগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এলএসডি গ্রহণ করেছেন অনেকেই এমন দাবি করে থাকেন। তবে হ্যালুসিনেশনই এসব অনুভূতির মূল কারণ বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করেন।