বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের দিনাজপুরের চিরিরবন্দর অংশে পাইপ ছিদ্র করে তেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চার জনকে।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বিকালে ওই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে সকালেই চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের চক ইসবপুর এলাকায় পাইপ লাইনে বিশেষ কায়দায় ছিদ্র করে তেল চুরির বিষয়টি জানতে পারেন সংশ্লিষ্টরা।
গ্রেফতাররা হলেন- চিরিরবন্দর উপজেলার উত্তর ভবানীপুর (ডাঙ্গারহাট) গ্রামের আলী উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৭), পার্বতীপুর উপজেলার সোনাপুকুর গ্রামের মাজুম আলীর ছেলে মানিক শাহ (৪৫), নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার সাশকান্দর গ্রামের মৃত তাবির উদ্দিনের ছেলে নাজমুল হক (৬৫) ও একই এলাকার ছলেমন বসু মিয়ার ছেলে আমিনুল ইসলাম (৪৮)।
চিরিরবন্দর থানার ওসি বজলুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এই ঘটনায় পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩৭৯ ধারায় একটি মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে।
ওসি জানান, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপ লাইন থেকে তেল চুরি হচ্ছে বিষয়টি মেশিনের সাহায্যে বুঝতে পারে ভারতীয় প্রকৌশলীরা। পরে তারা পার্বতীপুর ডিপোতে জানালে সেখান থেকে চিরিরবন্দর থানাকে জানানো হয়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানটিকে চিহ্নিত করে।
তিনি জানান, ওই স্থানে প্রায় ছয় ফুট গর্ত করে দেখা হয়েছে। ছয় ফুট নিয়ে মূল পাইপলাইন ফুটো করে তাতে স্ক্রু দিয়ে বিশেষ কায়দায় অন্য একটি চিকন পাইপ লাগানো হয়েছে। যেটা দিয়ে অল্প পরিমাণে তেল বের হয়। কিন্তু পাইপ লাইনে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে করে যেখানেই এই ধরনের সমস্যা হবে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের অভ্যন্তরে তা সিগন্যাল (নির্দেশনা) দেবে। ওই অংশ থেকে তেল চুরির বিষয়টি ভারত অংশে বুঝতে পারার পর তারা বাংলাদেশের প্রকৌশলীদেরকে জানায়। এই ঘটনায় ওই জমির মালিক, জমিতে সেচ দেয়া শ্যালো মেশিনের মালিক, প্রতিষ্ঠানের দুই লাইনম্যানকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে দুপুরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম শরীফুল হক, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপ লাইনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ওই পাইপ লাইনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।
উল্লেখ্য, কম খরচে এবং কম সময়ে ভারত থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য এই পাইপলাইনটি নির্মাণ করা হয়। গত ১৮ মার্চ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি পাইপলাইনে তেল আমদানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ভারতের শিলিগুড়ির নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে শুরু হওয়া ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপ লাইন শেষ হয়েছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর বিপিসি রেলহেড ডিপোতে। পাইপলাইনটি বাংলাদেশ অংশের পরিমাণ ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং ভারত অংশে ৫ কিলোমিটার।