লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সড়কে যাতায়াত করতে গিয়ে রোদ, ঝড়বৃষ্টিতে সাধারণ যাত্রীরা যেন ভোগান্তিতে না পড়েন সেদিক বিবেচনা করে জেলা পরিষদের উদ্যোগে বিভিন্ন বাসস্টপেজে সড়কের পাশে যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। যানবাহনের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীরা এসব ছাউনিতে বসে বিশ্রাম নেবেন। কিন্তু দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র। যাত্রীছাউনিগুলো দখল করে চলছে চা-পান ও ফল ব্যবসা। অন্যদিকে যাত্রীরা বসতে না পেরে দীর্ঘক্ষণ ছাউনির বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকছেন।
সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য তৈরি করা ছাউনিগুলোর বেশির ভাগই একশ্রেণির ‘প্রভাবশালী’ লোকজন তাদের ব্যবসা সাজিয়ে দখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিছুই জানে না বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম।
যাত্রীছাউনিগুলো হলো রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর-ভোলা আঞ্চলিক মহাসড়কের বাসাবাড়ী বাজার, রাখালিয়া সিএনজি স্টেশন ও পাটোয়ারী রাস্তার মাথায় পৃথক ৩টি এবং রায়পুর পৌরসভার উদ্যোগে বাস টার্মিনালে নির্মিত ২টি।
শনিবার (৬ জুলাই) সরজমিন গিয়ে জানা যায়, রায়পুরের রাখালিয়া সিএনজি স্টেশনে যাত্রীছাউনিটি দশ বছর আগে সেলিম নামের একজন ইজারা নেন। তিনি চা-দোকান দিয়ে কয়েক মাস চালিয়ে বন্ধ করে দেন। এরপর এটি অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকায় ইদ্রিস নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তার মালামাল সেখানে রেখেছেন। কর্তৃপক্ষ চাইলেই তিনি যেকোনও সময় এটি ছেড়ে দেবেন বলেও জানান।
বাসাবাড়ী বাজারের যাত্রীছাউনি দখল করে ফলের দোকান নিয়ে হারুন এবং তার বিপরীতে সবুজ পান দোকান নিয়ে বসে আছেন। এ ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞেস করতেই বলেন, ‘এখানে (যাত্রীছাউনি) কেউ দাঁড়ায় না। সপ্তাহে দুই দিন বাজার কমিটি ২০০ টাকা করে খাজনা নিয়ে যায়।’
পাটোয়ারী রাস্তার মাথায় যাত্রীছাউনিটি ইজারা দেওয়া হয় স্থানীয় মৃত নবী মেম্বারকে। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ভাতিজা শামিম চা-দোকান দিয়েছেন। এটির সামনে এখন সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাখা হয়। যাত্রীরা বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে বাসে উঠে গন্তব্যে চলে যান। সেখানে ছাউনির ভেতর যাত্রীদের বসার কিংবা দাঁড়ানোর পরিবেশ নেই।
পৃথক ওই তিনটি দোকান (যাত্রীছাউনির পাশে) আজীবন চুক্তিতে জেলা পরিষদ থেকে মাসিক ৭ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন জেলা পরিষদের সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) মামুন বিন জাকারিয়া। জরাজীর্ণ ছাউনিগুলো সংস্কার করে পরিষদের উন্নয়নের জন্য নিয়মনীতি অনুসরণ করে দোকান ভাড়া দেন বলে জানান তিনি।
সোহেল ও মাহবুব নামের দুই যাত্রী বলেন, ‘রাখালিয়া ও বাসাবাড়ী বাজারের যাত্রীছাউনি সঠিক জায়গায় করা হয়নি। যাত্রীদের বসার মতো কোনও পরিবেশ নেই বলে ছাউনিগুলোতে।’
রায়পুর বাস টার্মিনালে যাত্রীছাউনির সামনে দুটি চায়ের দোকান রয়েছে। অন্যদিকে পৌরসভা থেকে চলছে সংস্কারের কাজ। ফলে সেখানেও যাত্রীদের বসার পরিবেশ নাই বললেই চলে।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) মামুন বিন জাকারিয়া বলেন, ‘রাখালিয়া সিএনজি স্টেশনে যাত্রীছাউনি ১২ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। ছাউনিটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাটোয়ারী রাস্তার মাথায় যাত্রীছাউনিতে কনফেকশনারি দোকান রয়েছে। ওই দোকান মাঝে মাঝে চলে।’
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রীদের সুবিধার জন্য ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’