ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ১ হাজার ৬০০ ঘের-পুকুরের চিংড়ি ও মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে আছে হাজারের বেশি চিংড়িঘের। আর সাতক্ষীরার দুই উপজেলার কিছু চিংড়িঘের পানিতে তলিয়ে গেলেও বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বাগেরহাটে চিংড়ি ও মাছের ৭৭ হাজার ৫০০টি ঘের আছে। এখানকার ঘেরগুলোতে চিংড়ির সঙ্গে কার্পজাতীয় মাছের মিশ্র চাষ হয়। সিত্রাংয়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জেলা সদর, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, মোংলাসহ বেশ কিছু এলাকার ঘের তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে প্রায় দুই কোটি টাকার চিংড়ি ও মাছ।
বাগেরহাট সদরের কাশিমপুর এলাকার চাষি মো. কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হয়। আর এক ঘণ্টার বৃষ্টি হলেই সব ঘের ডুবে যেত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অবশ্য কবির হোসেনের পাশের দুটি ঘেরের চিংড়ি ভেসে গেছে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে। ডুবে যাওয়া ঘেরের মালিক সাইফুদ্দিন ও শরিফুল ইসলাম জানান, লবণাক্ততার কারণে এ মাঠে অন্য ফসল তেমন হয় না। চিংড়ি চাষই তাঁদের আয়ের একমাত্র উৎস। ঘের ভেসে যাওয়ায় তাঁরা বড় বিপদে পড়ে গেলেন।
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর মৌসুমের শুরুতে চিংড়িতে মড়ক লেগেছিল। গত সেপ্টেম্বরে সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ, জোয়ারের অস্বাভাবিক পানি ও টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটে আট হাজার ঘের ভেসে যায়। সিত্রাংয়ের কারণে আবার চিংড়িচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন। চিংড়িচাষিদের টিকিয়ে রাখতে মৎস্য বিমা চালুর দাবি করেন তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জেলার ১ হাজার ২৮টি চিংড়িঘের ও ৫৮০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মৎস্য বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ঘেরের পাড়ে নেট জাল দেওয়া এবং পানির উচ্চতা বেশি না হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ অন্যবারের চেয়ে কম হয়েছে বলে জানান এ মৎস্য কর্মকর্তা।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনির কিছু চিংড়িঘেরের ক্ষতি হয়েছে। আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার কারণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও চিংড়িঘেরের মালিকেরা।
জেলার মৎস্য বিভাগ জানায়, সাতক্ষীরায় ৮৬ হাজার হেক্টর জমিতে বাগদা ও গলদা চিংড়ির ৬৭ হাজার ৮০০টি ঘের আছে। এর মধ্যে উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ও আশাশুনিতে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ১১ হাজার চিংড়িঘের আছে।
শ্যামনগর উপজেলার চিংড়িচাষি আবদুল হাকিম বলেন, পাখিমারা বিলে ৩০ বিঘার একটি চিংড়িঘের আছে তাঁর। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রবল বৃষ্টিতে সেই ঘের পানিতে তলিয়ে আশপাশের ঘেরের সঙ্গে মিশে গেছে। এতে তাঁর কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সাতক্ষীরা চিংড়ি ঘের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কামাল বলেন, সিত্রাংয়ের সময় যাতে চিংড়িঘের ভেসে না যায়, সে জন্য আগাম প্রস্তুতি ছিল। রবি ও সোমবারের অতিবৃষ্টিতে শ্যামনগর ও আশাশুনির অল্প কিছু ঘের তলিয়ে গেছে। তবে বড় ক্ষতি হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, জেলায় দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে চিংড়িঘেরগুলোতে প্রয়োজনীয় পানির অভাব ছিল। এ বৃষ্টি তাঁদের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় চিংড়িঘের ভেসে যাওয়া কিংবা তলিয়ে যাওয়ার খবর তাঁদের কাছে নেই।