রমজান শুরুর আগ থেকেই নীলফামারীর বিভিন্ন বাজারে বেগুন, শশা ও খিরার দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। রমজানে বেগুনের চাহিদা থাকায় কিছু কিছু অসাধু খুচরা ব্যবসায়ী এর বাজারকে অস্থির করে তুলছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রোজাদারসহ সাধারণ ক্রেতারা।
শুক্রবার (২২ মার্চ) সকালে স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রকারভেদে কেজিপ্রতি গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। যা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। এ ছাড়াও পাইকারি বাজারে শশা ও খিরা বিক্রি ২৫-৩০ টাকায়। ওই খিরা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এ ছাড়াও প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৫০, প্রকারভেদে আলু ৩৫ থেকে ৪০ ও হালিপ্রতি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। রমজানে বেগুনসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ক্রেতারা।
বেগুন, শশা, লেবু ও খিরা কিনতে আসা জেলা শহরের নিউবাবু পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘১১ মাস ব্যবসা করে যা আয় করেন, রোজার মাসে তার দ্বিগুণ লাভ করে খুচরা ব্যবসায়ীরা। রোজার আগে এসব বেগুন বিক্রি হয়েছিল প্রতিকেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। আর এখন সেই বেগুন বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৫০ টাকায়। দেশে কোনও আইন কানুন নাই। ব্যবসায়ীরা যা করে তাই হয়।’
ওই বাজারে আরেক ক্রেতা খতিবর রহমান বলেন, ‘রোজা এলে স্বাভাবিকভাবে গোল বেগুনের একটু চাহিদা বাড়ে, আর তার সুবিধা নেয় খুচরা ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করার কেউ নেই।’
একই এলাকায় মেসে রান্না করা আলেয়া বেগম বলেন, ‘বাজার করে এসে হিসাব দেওয়ার সময় মেসের লোকজনের সঙ্গে অবিশ্বাস তৈরি হয়। কারণ ওরা বিশ্বাস করতে চায় না বেগুন, টমেটো, লেবু ও খিরা বাজার এত বেশি।’
ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রমজানকে পুঁজি করে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়। এ যেন মগের মুল্লুক, দেখার কেউ নাই।’
মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে কিচেন মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী গুলজার রহমান, নূর ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন পাইকারদেরকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, আড়ত থেকে এসব পণ্য বেশি দামে কিনতে হয়। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
খুচরা বাজারের বিক্রেতা নূর ইসলাম বলেন, ‘কাঁচামাল পচনশীল ও আড়তদার ওজনে কম দেওয়াসহ নানা কারণে লোকসান গুনতে হয়। বৃষ্টিতে আমদানি কম হওয়ায় পাইকারিতে হঠাৎ দাম বেড়ে গেছে, এখানে আমরা কী করবো?’
নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কৃষক ও বেগুন বিক্রেতা আইয়ুব আলী বলেন, ‘নিজের বেগুন ক্ষেত থেকে নিয়ে কেজি বিক্রি করছি ১০-১৫ টাকায়। সেই বেগুন পাইকাররা কিনে বিক্রি করছে ২০ টাকায়, আর বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। তিন হাত বদল হয়ে খুচরা ব্যবসায়ী বিক্রি করছেন ৫০ টাকা কেজি দরে। কৃষক মাথার ঘাম পয়ে ফেলে আবাদ করে লাভ কী? এতে লাভবান হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।’
আরেক খুচরা ব্যবসায়ী কাওসার আলী বলেন, ‘আমরা পাইকারি বাজার থেকে আলু, বেগুন টমেটো, গাজর, খিরা, শশা ও লেবু কিনে আনি, সেখানকার দাম অনুযায়ী খুচরায় বিক্রি করে থাকি। ফলে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ালে আমাদেরও বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘রোজার মাসে গোল বেগুন দিয়ে হোটেল ও ফুটপাতের দোকানে চপ তৈরি হয়। চাহিদা বেড়ে যায় তাই দামও বাড়ে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এ ছাড়াও আড়তদাররা ওজনে কম দেয়, আবার একদিন বিক্রি না হলে পচে যায়। ঝড়-বৃষ্টিতে মালামাল পাওয়া যায় না। তাই বিভিন্ন কারণে রোজার মাসে এসব কাঁচা মালের দাম ওঠানামা করে।’
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এ টি এম এরশাদ আলম খান বলেন, ‘কৃষক সারা বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আবাদ করে। অথচ বাজারে এসে ঠকছে ব্যবসায়ীদের কাছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রোজার মাসে একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে। জেলা পর্যায়ের মাসিক মিটিংয়ে আলোচনা করে দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’