হাঁসের খামার করে লাভবান হচ্ছেন খুলনার ডুমুরিয়ার খামারিরা। প্রতি বছর এ উপজেলায় কয়েক লাখ হাঁস পালন করে মাংস ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন অনেকে। এ অঞ্চলে হাঁসের মাংসের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। চাহিদার কথা মাথায় রেখে খামারিরা প্রতি বছর ব্যাপকভাবে হাঁস পালন করে এ অঞ্চলের মাংসের চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে খুলনা শহরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
‘এগুলো হাঁসের ছানা নয়, যেন আমার লালিত সন্তান! ক্ষুদ্র আকার থেকে শুরু করে এখন নিজ যত্নে এত হাঁসের খামার। তাদের নিজ হাতে বড় করি। এরাই আমার স্বপ্নপূরণের সিঁড়ি।’ শিবপুর বাদুর গাছার পিন্টু সরকার এভাবেই বলছিলেন নিজের স্বপ্ন বুননের কথা।
তিনি বলেন, ‘এ খামারটির মালিক আজমত ইকবাল স্বজল। তার ৪২ বিঘা জমির মধ্যে এক বছর আগে ১২০০ ডিমপাড়া হাঁস দিয়ে এ খামার শুরু হয়। তিনি এ খামারে ম্যানেজার হিসেবে রয়েছেন। এখান থেকে তারও স্বপ্নপূরণ হচ্ছে। এ খামার বর্তমানে তিন হাজার হাঁস রয়েছে। যা দল বেঁধে পুকুরে ছোটাছুটি করে। প্রাণবন্ত ও উন্মুক্ত পরিবেশে হাঁসছানারা পুকুরের পানিতে সাঁতার কেটে খেলে। হাঁসের প্যাক প্যাক ডাকাডাকিতে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।’ এভাবে নিজের স্বপ্নসিঁড়িতে পৌঁছে যাচ্ছেন খামারির সঙ্গে পিন্টু সরকারও। তিনি বড় বালতি ভরে ভরে হাঁসদের খাবার নিয়ে প্রতিদিন যত্ন নেন হাঁসগুলোর।
উপজেলার চুকনগর, কৈয়া বাজার, ডুমুরিয়ার বিভিন্ন সাপ্তাহিক হাট-বাজারে হাঁসের মাংস কেটে বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। প্রতিটি হাঁস কেটে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় এবং মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।
শোভনা ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের হাঁসখামারি সুমন্ত পাল বলেন, ‘আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁসের চাষ করছি। হাঁসের বাচ্চা ও খাদ্যসামগ্রীর মূল্য অধিক হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি। তাই আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না। ওই দফতর যদি আর্থিক ও ওষুধ সহায়তা প্রদান করে তাহলে খামারিরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন।’
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর ভেটেরিনারি সার্জন ডাক্তার প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু বলেন, ‘এ উপজেলায় প্রতি বছর চাহিদা অনুযায়ী হাঁস উৎপাদন হয়ে আসছে। চাহিদার কারণে হাঁস পালন প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনও হাঁস খামারি কোনও সমস্যার কথা বললে তাৎক্ষণিক খামার পরিদর্শন করে ওষুধ সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করছি।’
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আশরাফুল কবির বলেন, ‘ডুমুরিয়া উপজেলায় হাঁসের খামার থাকলেও কোনও খামারের নিবন্ধন নেই। বড় ধরনের (শতাধিক হাঁসের) খামার আছে ৮-১০টি। আর প্রতি বাড়িতেই ৬-১০টি করে হাঁস পালন করা হয়। বর্তমানে হাঁসের খামার নিবন্ধন করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা এবং সচেতনতা তৈরিতে কাজ চলছে। এর আগে না জানার কারণে নিবন্ধন হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ সহযোগিতা করতে সব সময় প্রস্তুত। আমাদের অফিসের মাধ্যমে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা হয় এবং হাঁসের টিকা প্রদানের পরামর্শ ফ্রি। সরকার নির্ধারিত ৫০ পয়সায় প্রতিটি হাঁসের টিকা ডুমুরিয়া প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে কিনতে পারেন খামারিরা।’ এ ছাড়াও সব হাঁস খামারিদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনাসহ কারিগরি প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা এ দফতরে রয়েছে বলে জানান তিনি।