বাণিজ্যিক ভবনের পার্কিংয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, অনুমতি পেলো কীভাবে?
বাংলাদেশ

বাণিজ্যিক ভবনের পার্কিংয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, অনুমতি পেলো কীভাবে?

দীর্ঘদিন থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এলাকার বিভিন্ন বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের পার্কিং স্পেস ভাড়া দিয়ে চলছে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। এসব ব্যবসা চালাতে করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স শাখা থেকে দেওয়া হচ্ছে ব্যবসার অনুমতিপত্রও। অথচ সিসিকের ইমরাত বিধিমালা আইনে বহুতল ভবনে পার্কিং রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের আগে মালিকরা সিসিকের সব আইন মেনে প্ল্যান অনুমোদন নিয়েই ভবন নির্মাণ করেন, পরে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা ভাড়া দিয়ে দেন। অভিযোগ উঠেছে, যথাযথ তদারকির অভাব আর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাণিজ্যিক মনোভাবের কারণেই সিসিকের আইন থাকার পরেও তা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের মেয়রের পালাবদল হলেও কেউই এ ব্যাপারে যথাযথ কোনও উদ্যোগ নেননি। অথচ ভবনের পার্কিং ভাড়া দেওয়ার কারণে সড়কে যানজট দেখা দেওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। সেইসঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতেও থাকছে এসব ভবন।

এদিকে বাণিজ্যিক ভবনের পার্কিংয়ে অবৈধ রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড থেকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ অধিদফতর সিলেট থেকে ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘ভবনগুলোতে পার্কিংয়ের জায়গায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করার কোনও আইন নেই। যদি হয়ে থাকে তাহলে এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।’

পার্কিংয়ে পরিচালিত রেস্টুরেন্টগুলো সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এটা যদি হয়ে থাকে, তবে এটা ভুল হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

পার্কিংয়ে গ্যাসের লাইন থাকায় ভবনগুলো মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের পরিচালক সফিকুল ইসলাম ভূঞা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আইন হলো অবশ্যই ফায়ার সেইফটির পাশাপাশি পার্কিং কিংবা বেইজমেন্ট থাকতে হবে। পার্কিং হলে শুধু পার্কিং থাকবে, এখানে রেস্টুরেন্ট কিংবা অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা যাবে না। আর পার্কিংয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করলে এটা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।’
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বহুতল ভবনে অবশ্যই পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পার্কিংয়ের জায়গা অন্য কিছু থাকার আইন নেই। কেউ যদি পার্কিং ভাড়া দিয়ে থাকেন, তাহলে এটা সিসিকের ইমরাত বিধিমালা আইনে সম্পূর্ণ অবৈধ।’

সিলেট নগরীর ব্যস্ততম এলাকার মধ্যে অন্যতম বন্দরবাজার। এই এলাকায় রয়েছে অর্ধশতাধিক বাণিজ্যিক ভবন। বন্দরবাজারের রয়েছে ‘সিটি হার্ট’ নামে ৬তলার বাণিজ্যিক ভবন। ভবনটিতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও তা ভাড়া নিয়ে এখানে দীর্ঘদিন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করে ‘সিটি হার্ট’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট। সম্প্রতি রেস্টুরেন্টটির নাম পরিবর্তন করে ‘জমজম রেস্টুরেন্ট’ নাম দেওয়া হয়েছে। 

একই সড়কে রয়েছে মডার্ন কমপ্লেক্স নামের ৫তলা বিশিষ্ট আরেকটি বাণিজ্যিক ভবন। ভবনটিতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও তা ভাড়া নিয়ে ‘মডার্ন রেস্টুরেন্ট’ নামে চলছে ব্যবসা। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি এলাকা সোবাহানীঘাটের হাজী নওয়াব আলী নামের ২তলা ভবনে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও তা ভাড়া নিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে পালকি রেস্টুরেন্ট। অথচ এই এলাকায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্নস্থান থেকে সবজি বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। 

এই এলাকা যানজট প্রতিদিনের চিত্র। যানজট নিরসনের জন্য এখানে স্থায়ী করে রাখা হয়েছে কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশকে। এছাড়া নগরীরর আরেকটি ব্যস্ততম এলাকা উপশহরের পয়েন্ট সংলগ্ন মেন্দিবাগ রোডের রয়েছে উপশহর কমপ্লেক্স নামের ৪তলা বিশিষ্ট একটি বাণিজ্যিক ভবন। ভবনের পার্কিংয়ে রয়েছে প্রেসিডেন্ট রেস্টুরেন্ট। এই রেস্টুরেন্টে আগতরা সড়কে যানবাহন রেখে রেস্টেুরেন্টে গিয়ে খাবার খান বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ।

এ বিষয়ে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) সারোয়ার জাহান মাহমুদের কাছে নগরীর বাণিজ্যিক ভবনের পার্কিংয়ে অবৈধ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেসব পার্কিংয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা হচ্ছে, যতটুকু জানি অনেক আগের এগুলো সংযোগ দেওয়া।‘

সংস্থাটির আরেক মহাব্যবস্থাপক (বিপণন উত্তর) প্রকৌশলী লিটন নন্দীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে বাণিজ্যিক ভবনের পার্কিংয়ে অবৈধ রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি কীভাবে দেওয়া হলো জানতে চাইলে সংস্থাটির উপ-মহাব্যবস্থাপক (এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড সেইফটি ডিপার্টমেন্ট) আব্দুল ওহাব বলেন, ‘আগে আমরা সেইফটিসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে গ্যাস সংযোগ দিয়েছি। বর্তমানে সিলেটে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। রেস্টুরেন্টে গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই পরিবেশ অধিদফতর ও সিসিকের ছাড়পত্র দেখাতে হয়। পার্কিংয়ের মধ্যে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার খবর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে আসবো।’

পরিবেশ অধিদফতর সিলেটের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘রেস্টেুরেন্টের পরিবেশগত যেসব দিক আছে, সেগুলো আমরা দেখি। আর ভবনের নিচে পার্কিং আছে কিনা কিংবা থাকলে কী ব্যবসা হচ্ছে এবং গ্যাস লাইন কেন সংযোগ দেওয়া হয়েছে; সেগুলো সিটি করপোরেশন ও জালালাবাদ গ্যাস অফিস দেখে। আমরা আমাদের কাজ করে থাকি।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘নিয়ম আছে ভবনে পার্কিংয়ের জন্য জায়গা রাখতে হবে। তবে যারা পার্কিংয়ের জায়গা ভাড়া নিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করে যাচ্ছেন; এটার কোন ভিত্তি নেই। বিষয়টি বর্তমান মেয়র মহোদয়ের নজরে আনা হবে।’

বহুতল ভবনে পার্কিংয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় আইনি বাধ্যবাধকতা থাকার পরেও কীভাবে করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এবং নবায়ন করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নে তিনি বিলেন, ‘এখন অনলাইনে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য দাখিল করে নবায়ন ও নতুন করে আবেদন করে থাকেন। যার জন্য সরেজমিনে তা দেখার সুযোগ হয় না।’

Source link

Related posts

ভেঙে ফেলতে হবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের অ্যানেক্স ভবনটি

News Desk

দ্রৌপদীকে অভিনন্দন জানিয়ে নাচলেন বাংলাদেশের সাঁওতালরা

News Desk

ভেজাল বীজে নষ্ট কয়েক হাজার একর জমির ধান, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

News Desk

Leave a Comment