ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্টল নির্মাণকারী কারিগররা। আগামী ১ জানুয়ারিতেই শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর। শেষ মুহূর্তে নির্দিষ্ট সময়ে স্টল নির্মাণ সম্পন্ন করতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কর্মব্যস্ত সময় পার কারিগর-শ্রমিকরা।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্টল তৈরির কাজ শেষ করে মালিকের কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা। শুরু থেকে দোকানপাট সাজিয়ে পুরোদমে বেচাকেনা করতে পারবেন বলে দাবি দোকান মালিকদের। মেলাকে প্রাণবন্ত ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সর্ব্বোচ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মেলার আয়োজক রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মেলায় যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাত শতাধিক পুলিশ। থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একাধিক টিম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গেটে থাকবে ইজারাদারের স্বেচ্ছাসেবকরা।
রাজধানীর উপকণ্ঠ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে পূর্বাচল উপশহরে স্থায়ী ভেন্যু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিউশন সেন্টারে চতুর্থবারের মতো বসছে বাণিজ্য মেলা। ১ জানুয়ারি সকাল ১০টায় অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এবার মেলার প্রধান প্রবেশদ্বার জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের স্মৃতির আদলে তৈরি করা হচ্ছে। মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে থাকছে দেশি-বিদেশি ৩৬২টি স্টল।
মেলার প্রধান প্রবেশদ্বারের পূর্ব পাশে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ কর্নার ও মূল ভবনের উত্তর পাশে থাকছে মুগ্ধ কর্নার। মূল ভবনের ভেতরে থাকছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন। দর্শনার্থীদের বসার জন্য থাকবে তিনটি সিটিং জোন। ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য থাকছে ডাচ বাংলা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের একাধিক বুথ।
মেলায় আসা শিশুদের জন্য থাকছে একটি ডিজিটাল শিশুপার্ক। মেলায় যেন কোনও প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেজন্য ২৩৪টি সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি থাকছে ৫টি ওয়াচ টাওয়ার। তাৎক্ষণিক সেবা দিতে থাকছে একাধিক পুলিশের টিম।
রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার লোকজন যেন নির্বিঘ্নে মেলায় আসতে পারেন সেজন্য অন্য বছরের মতো থাকছে বিআরটিসি বাস সার্ভিস। আগের তুলনায় এবার মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি বেশ ভালো হবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, স্টল নির্মাণ শেষ করতে কাজ চলছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। মেলা শুরুর আগেই মালিকপক্ষকে পুরোপুরি নির্মিত স্টল বুঝিয়ে দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কারিগররা।
মেলায় নিজেদের প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ তদারক করতে করতে দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের ম্যানেজার আখতারুজ্জামান রিপন বলেন, মেলা শুরুর আগেই সব প্যাভিলিয়নের স্টল নির্মাণ হয়ে যাবে। প্রতি বছর এমনটাই দেখা যায়। একেবারে শেষ দিকে এসে ২৪ ঘণ্টা ধরে নির্মাণের কাজ হয়। অন্যবারের চেয়ে এবার মেলা বেশি জমবে।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের ঘটনার কারণে মানুষ এক ধরনের ট্রমার মধ্যে রয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশ পেলে এই ট্রমা দূর হবে। মানুষের কাছে আগের মতো টাকা-পয়সা নেই ঠিকই। তারপরও যাদের কাছে আছে, তাদের সংখ্যাও কম নয়। আশা করা যায়, এবারও বেচাকেনা খারাপ হবে না।
ইমিটেশন জুয়েলারি ব্যবসায়ী সাইফুল মিয়া বলেন, স্টল নির্মাণের অর্ধেক কাজ অলরেডি শেষ হয়ে গেছে। বাকি অর্ধেক আশা করি ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। উদ্বোধনের দিন থেকে প্রোডাক্ট ডিসপ্লে করে দোকান চালু করে দেবো। গত বছর তেমন সুবিধা করতে পারিনি। এ বছর যেহেতু দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে তাই এবার ভালো কিছু আশা করছি।
স্টল নির্মাণ কারিগর শাহীন মিয়া বলেন, রাত দিন ২৪ ঘণ্টা আমরা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। বেশিরভাগ কাজ হয়ে গেছে। আশা করছি, উদ্বোধনের আগেই মালিকের কাছে স্টল বুঝিয়ে দিতে পারবো।
গেট ইজারাদারের প্রতিনিধি আবুল কাশেম বলেন, মেলায় দর্শনার্থীরা যেন কোনও
সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয় সেজন্য আগের বছরের মত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গেট ইজারাদারের পক্ষ থেকে থাকছে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক। তাছাড়া এবারের মেলায় প্রবেশ করতে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে টিকেট কিনতে পারবেন আগত দর্শনার্থীরা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, মেলায় যাতে প্রকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে সেজন্য দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। মোতায়েন থাকবে সাত শতাধিক পুলিশ। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। বসানো হয়েছে পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ার। স্থাপন করা হয়েছে একটি পুলিশ ক্যাম্প।