বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় সাতটি বাংকারের খোঁজ পেয়েছে সেনাবাহিনী। এসব বাংকারে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা অবস্থান করেছিল।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে টহল দেওয়ার সময় রোয়াংছড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বালু পাহাড় এলাকায় এসব বাংকার দেখা গেছে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে বাংকারগুলো থেকে বের হয়ে কেএনএফের সদস্যরা পাহাড়ের ভেতরে পালিয়ে যায়। বাংকার থেকে রাত্রিযাপনের কাঁথা, কম্বল, বালিশ ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সেনাবাহিনীর রোয়াংছড়ি উপজেলার সাব-জোন কমান্ডার মেজর এম এম ইয়াসিন আজিজ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৫ অক্টোবর কেএনএফের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে সশরীরে বৈঠক করে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে গঠিত শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। সেখানে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর ওই এলাকাগুলোতে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও অপরাধ অনেকটাই কমে এসেছিল। সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় আসছে কেএনএফের নাম। রোয়াংছড়িতে ঘুরতে আসা দুই প্রবাসী পর্যটক অভিযোগ করেছেন, তাদের কাছ থেকে বালু পাহাড় এলাকায় মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় কেএনএফের সদস্যরা। এ ঘটনায় রোয়াংছড়ি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন তারা।
রোয়াংছড়ি থানার ওসি মো. পারভেজ আলী বলেন, ‘পর্যটকদের কাছ থেকে কে বা কারা মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনতাই করেছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এখনও কাউকে এই ঘটনায় আটক করা যায়নি।’
এদিকে, ছিনতাইয়ের ঘটনার পর ওই এলাকায় টহল জোরদার করে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার সকালে টহলকালে বালু পাহাড় এলাকায় কেএনএফের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এ সময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে কেএনএফের সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরে সেখানে সাতটি বাংকার দেখা যায়।
সাতটি বাংকার পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সেনাবাহিনীর রোয়াংছড়ি উপজেলার সাব-জোন কমান্ডার মেজর এম এম ইয়াসিন আজিজ বলেন, ‘বাংকারগুলোতে কেএনএফের সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থান করেছিল। বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। পাহাড়ের ওই স্থান থেকে যে কারও ওপর যেকোনো ধরনের হামলা চালানোর সুবিধার্থে বাংকারগুলো খুঁড়ে অবস্থান নিয়েছিল কেএনএফের সদস্যরা। আমাদের অবস্থান টের পেয়ে তারা পালিয়ে গেছে। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে আমাদের।’
এ ব্যাপারে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য রেভা পাকসীম বম বলেন, ‘কেএনএফের শীর্ষ নেতারা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করার পর ওই এলাকার বাসিন্দারা শান্তিতে ছিল। সম্প্রতি আবারও অশান্তি শুরু করেছে কেএনএফ। তাদের এই ধরনের কর্মকাণ্ড দুঃখজনক। বম স্যোশাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজার লম বমের মাধ্যমে কেএনএফ প্রধান নাথান বমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি আমরা।’
এ বিষয়ে বম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জেমস লাল থারঙাক বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ড দুঃখজনক। আমরা সহিংসতা পরিহার করে একে-অপরের সঙ্গে বন্ধন রেখে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।’