Image default
বাংলাদেশ

বাবার সঙ্গে সাইকেল কিনে বাড়িতে ফেরা হলো না মিষ্টিমণির

ছোট্ট মিষ্টিমণি (৭) বায়না ধরেছিল বাইসাইকেলের। বাবা আসাদুজ্জামান আদরের মেয়ের বায়না অপূর্ণ রাখতে চাননি। মেয়েকে মোটরসাইকেলে তুলে চলে আসেন রংপুর মহানগরে। উদ্দেশ্য সাইকেল কেনার। একটি দোকানে ঢুকে হরেক রকম সাইকেল দেখে মিষ্টিমণির সেকি আনন্দ। এরপর তার পছন্দমতোই বাইসাইকেল কিনে দেন বাবা। সাইকেল হাতে পেয়ে মিষ্টিমণির যেন তর সইছিল না। দোকানের ভেতরেই সে সাইকেলে চড়ে বসে। বাবা তখন স্মিত হেসে বলেন, ‘ব্যস্ত হইয়ো না, মা। বাড়িতে গিয়ে চালাইয়ো।’

এরপরই বাবা-মেয়ে মোটরসাইকেলে উঠে পড়েন। নতুন ছোট্ট বাইসাইকেলটি মোটরসাইকেলের সিটে তুলে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। পথে পাথরবোঝাই একটি ট্রাক পেছন থেকে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে বাইসাইকেলসহ সড়কে ছিটকে পড়ে মিষ্টিমণির মাথা থেঁতলে যায়। আশপাশের লোকজন দ্রুত ছুটে আসেন শিশুটির দিকে। কিন্তু ততক্ষণে মিষ্টিমণির ছোট্ট দেহটি নিথর হয়ে পড়েছে।

হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটায় রংপুরের গঙ্গাচড়া-বেতগাড়ী সড়কের গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের ঠাকুড়াদহ খামাতপাড়া গ্রামের কাছে। নিহত মিষ্টিমণির বাবার নাম আসাদুজ্জামান ওরফে মিস্টার। বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামে। তাঁর দুই সন্তানের মধ্যে মিষ্টিমণি ছিল বড়। ছোট সন্তানটি ছেলে। আসাদুজ্জামান গঙ্গাচড়া উপজেলার বকশীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী পদে চাকরি করেন। মিষ্টিমণি ওই বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত।

বিকেল পাঁচটার দিকে নিহত মিষ্টিমণির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে অসংখ্য শোকার্ত মানুষের ভিড়। কয়েকজন পুলিশ সদস্যও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মিষ্টিমণির মরদেহ তখন গোসল করানো হচ্ছিল। পুলিশ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাইলে স্বজন ও গ্রামবাসীরা তাতে বাধা দেন।

মিষ্টিমণির শোকার্ত বাবা আসাদুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে মেয়ের বায়না, বাইসাইকেল কেনা ও একসঙ্গে বাড়িতে ফেরার সময়ে ওই দুর্ঘটনার কথা জানা যায়। তবে আসাদুজ্জামান এ সময় কোনো ছবি তুলতে সংবাদকর্মীদের নিষেধ করেন। এ কারণে তাঁর কোনো ছবি তোলা যায়নি।

মিষ্টিমণির বাবা আসাদুজ্জামান কান্না চেপে বলেন, ‘মেয়েটা সাইকেল কিনে দিতে বলেছিল। আর্থিক সমস্যা হলেও বাচ্চার শখ অপূর্ণ রাখতে চাইনি। সাইকেল কিনে দিলাম, কিন্তু কে জানত এমনটা হবে। বাবা হিসেবে সন্তান হারানোর বেদনা কীভাবে সহ্য করব। কীভাবে এই কষ্ট বুকে নিয়ে চলব। সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন। কারও প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।’

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি সুশান্ত কুমার সরকার রাত নয়টায় বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। পাথরবোঝাই ট্রাকসহ চালক জিতুল হোসেনকে (৪৯) আটক করা হয়েছে। চালকের বাড়ি রংপুর নগরের উত্তর কেল্লাবন পশ্চিমপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় এখনো নিহত মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা করেননি।

Related posts

ছয় আসনে ৪৭ প্রার্থী, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

News Desk

বিছানায় পড়ে ছিল স্বামীর লাশ, স্ত্রী আটক

News Desk

খাবারের কষ্টে দিন কাটানো কিশোরের জাতীয় রেকর্ড

News Desk

Leave a Comment