মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় এলাকায় অবস্থিত ইস্পাত প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম কর্তৃক গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলনের ফলে সুপেয় পানি সংকট দেখা দিয়েছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। অভিযোগ রয়েছে ইস্পাত শিল্প প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম কারখানায় ইস্পাত তৈরির কাজে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে পানির লেয়ার আশংকাজনক ভাবে নেমে গেছে। গভীর নলকূপ বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি চুষে নিচ্ছে।
ফলে মিরসরাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। এনিয়ে স্থানীয় জনগন আন্দোলনের হুমকি দিলে উপজেলা প্রশাসন জন বিষ্ফোরণ ঠেকাতে বিএসআরএম কতৃপক্ষের সাথে গত ১৭ মে বৈঠক কওে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প পন্থায় ফেনী নদীর পানি ব্যবহারের পরামর্শ দেন। উপজেলা প্রশাসনের নির্দশনা বাস্তবায়নে বিএসআরএম কতৃপক্ষের অগ্রগতি দেখার জন্য ২৪ মে দুপুর ১২টায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেন উপজেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ন কর্মকর্তাগন। জানা গেছে, সোনাপাহাড় এলাকায় অবস্থিত রড প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম প্রথমে ছোট আকারে কারখানা কার্যক্রম শুরু করলেও ক্রমান্বয়ে উপজেলার জোরারগঞ্জ, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় বৃহৎ অংশ নিয়ে এর বিস্তৃতি করে ফেলেছে। কারখানা নির্মাণ করার সময় সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করার পাশাপাশি কেটে ফেলেছে শতাধিক পাহাড়। বিএসআরএম কারখানায় ব্যবহারের জন্য ফেনী নদী থেকে পানি সংগ্রহের কথা থাকলেও তারা কারখানা এলাকায় একাধিক গভীর নলকূপ বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে আসছে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানি সংকট দেখা দিলে বিএসআরএম এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলার প্রশাসনকে নির্দেশ দেন মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ করে কারখানায় ব্যবহারের জন্য ফেনী নদী বা বিকল্প উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করার জন্য বিএসআরএম কে নির্দেশ দেন সাবেক এই মন্ত্রী। এদিকে সোমবার (২৪ মে) দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বিএসআরএম কর্তৃপক্ষের সাথে জরুরী মিটিং ও কারখানা পরিদর্শন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুবল চাকমা, উপজেলা প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান, মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মজিবুর রহমান, জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নুর হোসেন মামুন, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কে এম সাঈদ মাহমুদ, মিরসরাই প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. নুরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউসুফ।
বিএসআরএমের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এবিএম আসাদুজ্জামান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. দেলোয়ার হোসেন মোল্লা, ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ বিভাগ) মো. জামাল হোসাইন। বিএসআরএমের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. দেলোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, সারা বছর দেশে যে পরিমাণ রড প্রয়োজন হয় তার ৪০% বিএসআরএম সরবরাহ করে থাকে। সোনাপাহাড়ের কারাখানাটি বিএসআরএমের সবচেয়ে বড় কারখানা। কারখানায় ব্যবহারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ২ হাজার ৫’শ কিউমেক পানি ব্যবহারে আমাদের অনুমোদন আছে।
আমরা ৪টি গভীর নলকূপ দিয়ে ৭’শ ৪৫ কিউমেক পানি উত্তোলন করতেছি। মিরসরাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে পানি সংকট দেখা দেওয়ার ৩টি নলকূপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ৪টি ভাউচারে করে প্রতিদিন ফেনী নদী থেকে আমরা পানি এনে কারখানায় ব্যবহার করছি। ক্রমান্বয়ে ভাউচারের সংখ্যা বাড়ানো হবে। তিনি আরো বলেন, ফেনী নদী থেকে পানি ব্যবহারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের অনুমোদন দিয়েছে; কিন্তু পাইপ বসানোর জন্য আমরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেও এখনো কোন সাড়া পাইনি। রেলওয়ে যদি তাদের ভূমি ব্যবহারে জন্য ভাড়া বাবদ কত টাকা নিবে তা জানায়; তাহলে আমরা তাদের সাথে চুক্তি করবো। এছাড়া আমাদের কারখানার পিছনে বারমাসি ছড়ায় একটি কৃত্রিম লেক স্থাপন করার জন্য আমরা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। সেটি অনুমোদন পেয়ে গেলে কারখানার পানি সংকট কেটে যাবে বলে তিনি জানান। উপজেলা চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিএসআরএম শিল্পগ্রুপ গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলনের কারণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে স্থানীয় জনগণ ক্ষোভে ফুসে উঠছে।
আমাদের অভিভাবক মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে আমরা বিএসআরএম কর্তৃপক্ষের সাথে জরুরী মিটিং করেছি। ফেনী নদী থেকে পানি আনয়নের জন্য পাইপ লাইন না বসানো পর্যন্ত ভাউচারে করে পানি আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তারা কারখানার ভেতর যে গভীর নলকূপ বসিয়েছে তা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাইপ বসানোর পূর্ব সময় পর্যন্ত বিএসআরএম একটি গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলন করবে এবং ভাউচারে করে ফেনী নদী থেকে পানি এনে ব্যবহার করবে বলে আমাদের আশ^স্ত করেছে।