প্রযুক্তির আশীর্বাদে এখন আমাদের চারপাশে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। সবকিছুতে প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ, সরল ও গতিশীল করে তুলেছে। আমাদের জীবনের তাই ছোট বড় প্রতিটি কাজে প্রযুক্তি জড়িয়ে আছে নিঃস্বার্থভাবে। প্রযুক্তির কল্যাণে আজকাল আমরা ঘরে বসেই সমস্ত কাজ-কর্ম করতে পারছি।
ঘরে বসে ক্লাস করা, পড়াশোনা করা, খাবার অর্ডার দেওয়া, টিকেট কেনা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আদান- প্রদান করা থেকে সমস্ত কাজকর্ম সম্পন্ন হচ্ছে শুধুমাত্র প্রযুক্তির মাধ্যমে। তাই আজকাল প্রযুক্তির হয়ে গেছে আমাদের পরম বন্ধু।
প্রযুক্তির অন্যতম একটি আশীর্বাদ হল মোবাইলে লেনদেন। নগদ, বিকাশ, রকেট বর্তমানে জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস। তবে, এদের মধ্যে আবার এজেন্ট, মার্চেন্ট, উদ্যেক্তা নামে অ্যাকাউন্টের কিছু পার্থক্য আছে।
কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা, বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট মানে কি? ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিকাশ বন্ধরূপে আবির্ভূত হয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে, বিক্রেতাকে যে একাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করা হয় তাকে মার্চেন্ট একাউন্ট বলা হয়। মার্চেন্ট একাউন্ট বিকাশে এক অন্যতম জনপ্রিয় একটি উদ্যোগ। এর ফলে ব্যবসা বাণিজ্যে লেনদেন হয়ে গেছে সহজ।
ক্রেতারা পণ্য কিনে, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিকাশের payment অপশনে গিয়ে, বিক্রেতাকে অর্থ প্রদান করা হয়, তাকে মার্চেন্ট একাউন্ট বলে। মার্চেন্ট একাউন্টে টাকা প্রদান করে কিনতে পারবেন তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য। আপনার ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে মার্চেন্ট একাউন্টের সুযোগ সুবিধা তুলনামূলক বেশি বিধায়, ব্যবসায়ীদের অন্যতম পছন্দ হল মার্চেন্ট একাউন্ট।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
আমাদের মধ্যে যারা নতুন ব্যবসা করার কথা ভাবছেন, কিন্তু মার্চেন্ট একাউন্ট সম্পর্কে ধারণা নেই, তাদের জন্যই আজকের পোস্টটি। আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না কিভাবে মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে হয়৷! চলুন তাহলে জেনে আসি মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়মাবলী।
মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে হলে অবশ্যই আপনার নিজের বিকাশ একাউন্ট থাকতে হয়ে। প্রথমে আপনার মোবাইলের যেকোনো ব্রাউজার থেকে www.bkash.com/bn/i-want-register/send-registration-request সাইটে ভিজিট করতে হবে। একাউন্ট খোলা না থাকলে একাউন্ট খুলে নিবেন।
একাউন্ট খোলা হলে আপনি ২ টি অপশন পাবেন। যথা:
- এজেন্ট
- মার্চেন্ট
২ টি অপশন থেকে মার্চেন্ট একাউন্টে ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পর একটা ফর্ম আসবে, ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
ফরমের দেওয়া তথ্যে আলোকে বিকাশ আপনার একাউন্ট খোলার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখবেন। একটি মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে হলে আপনার অনেক তথ্যের দরকার হয়।
তাহলে জেনে আসি কি কি তথ্য প্রযোজ্য হয়, একটি মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে।
- একটি একটিভ মোবাইল নম্বর।
- আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে জন্ম নিবন্ধন/ ড্রাইভিং লাইসেন্স।
- আপনার দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স।
- টিন নাম্বার।
- সচল ব্যাংক একাউন্ট।
- মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য অনুমতি পত্র।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা
মার্চেন্ট একাউন্ট ব্যবসা ক্ষেত্রে, লেনদেনকে অনেক সহজ করে তুলেছে। বর্তমানে সময়ের সাথে বিকাশ গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের সংখ্যা বাড়ছে। বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে লেনদেন অনেক সহজ বিধায়, আজকাল সকলের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে এই মার্চেন্ট একাউন্ট। কিন্তু আপনি কি জানেন মার্চেন্ট একাউন্টের সুবিধা সমূহের কথা
- আপনি যদি কেনাকাটার ক্ষেত্রে মার্চেন্ট একাউন্টে পেমেন্ট করেন, সেখানে আপনাকে চার্জ তুলনামূলক প্রায় ১.৭% কম কাটা হয়। যেখানে ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে, কেনাকাটার ক্ষেত্রে চার্জ কাটা হয় ১.৮৫% টাকা।
- ব্যক্তিগত একাউন্টের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট সীমা থেকে। নির্দিষ্ট সীমার বাইরে টাকা জমা দেওয়া যায় না। কিংবা লেনদেন করা যায় না। কিন্তু মার্চেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে কোন ধরণের লি-মিট থাকে না। আপনি যত পরিমাণ ইচ্ছে ঠিক তত পরিমাণ টাকা লেনদেন করতে পারবেন।
- আপনি কেনাকাটার ক্ষেত্রে বিকাশে মার্চেন্ট একাউন্ট পেমেন্ট করলে, আপনার থেকে কোন টাকা অতিরিক্ত কাটা হবে না।
- ব্যক্তিগত একাউন্টের তুলনায় মার্চেন্টের লেনদেন করা অনেক বেশি নিরাপদ। তাই ব্যবসায়ীদের প্রথম পছন্দ মার্চেন্ট একাউন্ট।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর অসুবিধা
প্রায় সব কিছুরই দুটি ভাগ থেকে। মার্চেন্ট একাউন্ট তার ব্যতিক্রম নয়। এতক্ষণ মার্চেন্ট একাউন্টের সুবিধা সমূহ সম্পর্কে জানলাম। চলুন জেনে নেই এর অসুবিধাসমূহ সম্পর্কে:
- মার্চেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে, গ্রাহকগণ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে পেমেন্ট করতে পারবে। কিন্তু যাদের বিকাশ একাউন্ট নেই, তারা কখনোই মার্চেন্ট পেমেন্ট করতে পারবেনা।
- ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে আপনি মুহূর্তের মধ্যে যখন ইচ্ছা, ঠিক তখনই টাকা তুলতে পারবেন। কিন্তু মার্চেন্ট একাউন্টে টাকা তুলতে হলে আপনাকে ব্যাংকের শরণাপন্ন হতে হবে। কিন্তু ব্যাংক থেকে আপনি সাথে সাথে টাকা তুলতে পারবেন না। যখন টাকা আপনার ব্যাংক একাউন্টে জমা হবে, ঠিক পরের কার্যদিবসে আপনি সেই টাকা তুলতে পারবেন।
আর এই সমস্ত সুযোগ সুবিধা ছাড়াও বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে আরো বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।আশাকরি, বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে যে সুবিধা রয়েছে, তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারেন।