কুয়াশায় ঢাকা ও কনকনে শীত উপেক্ষা করেই সর্বস্তরের মানুষের ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হলো জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। জাতীর বীর সন্তানদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলে ফুলে ভরে উঠতে শুরু করে শহীদ বেদি। সবার হাতে ছিল লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা আর বিভিন্ন রংবেরঙের ফুল। পোশাকেও লাল-সবুজের সরব উপস্থিতি। আবার অনেকের হাতে শোভা পাচ্ছে ব্যানার। কণ্ঠে রয়েছে দেশের গান।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা ৩৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পর জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটক। পরে সারিবদ্ধভাবে একে একে শ্রদ্ধা জানাতে থাকেন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। স্মৃতিসৌধ এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। চারদিক থেকে মানুষের স্রোত গিয়ে মিশছে স্মৃতিসৌধে। মানুষের বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি।
শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন সাভারের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন মন্ডল। তিনি বলেন, ‘আজ স্মৃতিসৌধে গণমানুষের ঢল নেমেছে। সবাই একে একে নিবেদন করছেন শ্রদ্ধা। আমি আমার সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানিয়েছি। আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু আমার সহযোদ্ধারা এই স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে জীবন দিয়েছেন। তারা দেখে যেতে পারেননি স্বাধীনতা। আজ তারা সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধায় সিক্ত। এটাও আমার কাছে বড় পাওয়া।’
গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকা থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা রাকিবুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করতে পারিনি। কিন্তু যারা যুদ্ধ করেছেন, দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন; তাদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা প্রয়োজন। তাই শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি।’ প্রায় প্রতিবছরই তিনি শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন স্মৃতিসৌধে।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা। সৌধ প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। পোশাকধারী পুলিশ-র্যাব ছাড়াও সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কড়া নজরদারিতে রেখেছে গোটা স্মৃতিসৌধ এলাকা। এ ছাড়াও সৌধ প্রাঙ্গণের বাইরে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে সব সময় মনিটরিং করা হচ্ছে চারদিক।