ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি দখলমুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোল চত্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, করোনার কারণে দীর্ঘ দুই বছর বিদ্যালয়ের পাঠ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ সুযোগে বিদ্যালয়ের নিজস্ব ও আবাদি জমিসহ ১৭ শতক জায়গা রাতের আঁধারে দখল করে নেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আনার কলি। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন তারা। অবরোধের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বর্ষা জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে রেখেছেন নারী নেত্রী আনার কলি। ফলে বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা করতে পারছি না। আমরা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছি না। আমাদের জায়গা ফেরত চাই।
সাদিয়া আক্তার নামে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, আমাদের জায়গা দখল করে রেখেছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী আনার কলি। যার কারণে আমরা নিরাপত্তা পাচ্ছি না। ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছি না। খেলার মাঠ পাচ্ছি না। জায়গা ফেরত পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি। আমাদের জায়গা উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই।
নুসরাত জাহান তিশা নামে আরেক শিক্ষার্থী জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি- তিনি যেন আমাদের ১২০০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আনার কলির হাত থেকে দখলকৃত জমি উদ্ধার করে দেন।
রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎসাহী সদস্য সেলিম রেজা বলেন, বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন আনার কলি। জায়গা উদ্ধারে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। আমরা বিদ্যালয়ের জায়গা ফেরত চাই।
রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. খুরশেদ আলী বলেন, বিদ্যালয়ের তিনটি ভবনসহ ২৫ শতাংশ জায়গা মহাসড়কের চারলেন সম্প্রসারণের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে কেউ আমাদের জায়গা নিয়ে যাবে, তা হতে পারে না। আমরা জায়গা ফেরত চাই।
আশুগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিউর রহমান সরকার বলেন, বিদ্যালয়ের যে অবশিষ্ট জায়গা আছে, সেটি যেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। অবৈধভাবে বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করেছেন আনার কলি। তাকে উচ্ছেদ করে জায়গাটি বিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেওয়া হোক।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের জমি দখল করেছেন নারী নেত্রী আনার কলি। দখলকৃত জমি উদ্ধারের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। আমরা তাদের বুঝিয়ে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি।
এ বিষয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আনার কলি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জায়গা দখলের প্রশ্নই আসে না। এই অভিযোগ মিথ্যা। বিদ্যালয়ের পাশের ওই জমি আমার স্বামীর পৈতৃক সম্পত্তি। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ওই জায়গা দখলে নিয়েছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরবিন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জায়গা দখলে নিতে আনার কলিকে কোনও সহায়তা করেনি স্থানীয় প্রশাসন। তিনি মিথ্যা বলেছেন। স্বামীর পৈতৃক সম্পত্তি হলে তিনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করে নিলেই হয়।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, নারী নেত্রী আনার কলি বিদ্যালয়ের ১৭ শতক জায়গা দখল করেছেন। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে গত ৩০ এপ্রিল লাঞ্ছিত হন উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল হক। পরে তিনি আশুগঞ্জ থানায় আনার কলির বিরুদ্ধে জিডি করেন। এ ঘটনার তথ্য জানতে গিয়ে গত ১৮ মে তার হাতে লাঞ্ছিত হন সময় টিভির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যুরো প্রধান ও বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি উজ্জল চক্রবর্তী। পরে উল্টো উজ্জল চক্রবর্তীসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে ২২ মে চাঁদাবাজির মামলা করেন আনার কলি।