করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেয়া কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও অনেকেই বেরিয়েছেন রাস্তায়। বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন রোববার (২৫ জুলাই) রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘুরে এমন মানুষ দেখা গেছে। তারা বলছেন, সরকার বিধিনিষেধ দিয়েছে, তারাও এর পক্ষে। কিন্তু তাদের পেট চলবে কীভাবে? সংসার চলবে কীভাবে? সরকারের কোনো সাহায্য তাদের কাছে যাচ্ছে না। তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় আসছেন।
শনির আখড়া আন্ডার পাসের উপরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢালে গাড়িতে করে মাস্ক বিক্রি করছিলেন শাহজাহান মিয়া। তিনি বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়া বাইর হইছি ঠিকই, বিক্রি কই! মানুষ নাই বেচমু কার কাছে? আবার না বাইরাইয়াও তো উপায় নাই। সংসার চলব কেমনে?
এই মহাসড়কের ঢালে ইজিবাইক নিয়ে সাইনবোর্ডের যাত্রী ডাকছিলেন চালক মো. হাসান। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে, এক মেয়েসহ ৫ জনের সংসার। লকডাউনের কারণে বড় বিপদে পইড়া গেছি পরিবার নিয়া। ধার-দেনা কইরা কোনো রকম সংসার চালাইতাছি।
হাসান আরও বলেন, ‘হাইওয়েতে ইজিবাইক চালানো নিষেধ। তারপরও যাত্রীর আশায় আইছি। যেকোন সময় পুলিশে ধরতে পারে। ভয়েই অস্থির হয়ে আছি, কী যাত্রী ডাকুম। পুলিশ দেখলে রাস্তা থুইয়া চিপা-চাপায় ঢুকাইয়া দেই।
ভ্যানে মালামাল পরিবহন করেন আজহার উদ্দিন। তিনি জানান, লকডাউনে কাজ নেই। ভ্যানে এখন মালপত্রের পরিবর্তে মানুষ বহন করছেন। শনির আখড়া থেকে মাতুয়াইল মেডিকেল এলাকায় যেতে ডেকে ডেকে ভ্যান ভর্তি করে ফেলেছেন যাত্রীতে।
আজহার উদ্দিন বলেন, ‘সরকার তো লকডাউন দিয়াই খালাস। আমাগো জন্য কী করল, আমাগো প্যাটে তো ভাত নাই। বাচ্চা-কাচ্চা আছে, মা-বাপ আছে। কাম করতে না পারলে কী খামু আমরা! সরকারের সাহায্য-সহযোগিতা তো দূরের কথা একটা দানা পর্যন্ত এহনও পাই নাই।’
ধীরে ধীরে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন শফিকুল। যেতে যেতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কারো চোখে চোখ পড়লেই ইশারা করছিলেন- ‘যাবেন কি না’।
শফিকুল বলেন, ‘বাইক চালিয়ে ভালই চলছিলাম। করোনার কারণে সব আউলাঝাউলা হয়ে গেছে। আমার একটা ছোট বাচ্চা আছে, স্ত্রী আছে। ঝুঁকি, বিপদ জেনেও বাধ্য হয়ে বাইর হইছি। দুজন নিয়া চালানো যায় না। যাত্রী টানতাছি বুঝতে পারলে কোনো কথা ছাড়াই মামলা দিব পুলিশ।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে বিধিনিষেধ আরোপ করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আটদিনের জন্য শিথিল করা হয়েছিল বিধিনিষেধ। এরপর আবার গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। বিধিনিষেধের মধ্যে বন্ধ আছে সব ধরনের গণপরিবহন, সরকারি ও বেসরকারি অফিস এবং শিল্পকারখানা। বন্ধ রয়েছে দোকান এবং শপিংমল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষের বাইরে বের হওয়া নিষেধ।