বাম রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত জেরেমি করবিন বলেন, কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীন গণমাধ্যম অপরিহার্য। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে আপস করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘বিবিসি হলো জনসেবামূলক সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ। এর স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে।’
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে সব সময় সোচ্চার থাকবেন উল্লেখ করে করবিন বলেন, ‘আমি উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে আগামীকালও (আজ শনিবার) পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভে অংশ নিতে যাচ্ছি।’
আলোচনায় বাংলাদেশিদের পক্ষে অবস্থানের স্মৃতিচারণা করেন করবিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা আমি খুব ভালো করেই জানি। ১৯৭০–এর দশকে এই পূর্ব লন্ডনে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশিদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে।’ সে সময় বর্ণবাদী সংগঠন ‘ন্যাশনাল ফ্রন্ট’–এর বিরুদ্ধে বাঙালিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে লড়াই করার কথা স্মরণ করেন জেরেমি করবিন।
খরচ বাঁচাতে সম্প্রতি বাংলাসহ ১০টি ভাষার রেডিও সেবা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় বিবিসি কর্তৃপক্ষ। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব ভাষার অনলাইন সেবা চালু থাকলেও তা আর লন্ডন থেকে পরিচালিত হবে না। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হবে এসব ভাষা বিভাগের সম্পূর্ণ কার্যক্রম। সে হিসেবে বিবিসি বাংলা বিভাগের সব কাজ ঢাকা থেকে পরিচালিত হবে।
বিবিসি বাংলার রেডিও সেবা বন্ধের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের শ্রোতাদের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যপ্রবাসীদের মধ্যেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তি জানিয়েছেন। বিশেষ করে ঢাকায় বাংলা বিভাগের সব কার্যক্রম স্থানান্তরের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন তাঁরা।
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিবিসি বাংলা বিভাগের সম্পূর্ণ কার্যক্রম ঢাকায় স্থানান্তর হলে স্বাধীন সাংবাদিকতার সুযোগ সীমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ, তখন বিবিসি বাংলাকেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর মতো ক্ষমতাসীনদের প্রভাব মোকাবিলার ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবিসির মতো একটি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার কথা স্মরণ করে এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, বার্মিজ ভাষা বিভাগ লন্ডনেই থাকছে। কারণ, বিবিসি জানে মিয়ানমারে কার্যক্রম স্থানান্তর করে স্বাধীন সাংবাদিকতা করা সম্ভব হবে না। কর্মীদেরও নিরাপত্তা দেওয়া যাবে না। বাংলার ক্ষেত্রেও সমান ঝুঁকি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’