বিভক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রহ্মপুত্রের ২ পাড়ে চলছে পাঠদান
বাংলাদেশ

বিভক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রহ্মপুত্রের ২ পাড়ে চলছে পাঠদান

একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই ভাগে বিভক্ত। মাঝখানে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এর এক অংশে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন প্রধান শিক্ষক একা, আরেক অংশে সব সহকারী শিক্ষক।

কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১ এর চিত্র এটি। দীর্ঘদিন ধরে এই পরিস্থিতি চলছে। কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও অচলাবস্থা নিরসনে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ নদী ভাঙনের হুমকিতে পড়ে। এ কারণে গত ১৩ মার্চ ব্রহ্মপুত্রের পূর্বপাড়ে শংকর মাধবপুর মৌজায় স্থানান্তরের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। ‘পূর্বপাড়ে নিলে বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে’ বলেও আবেদনে উল্লেখ করেন। আবেদনে স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সুপারিশও নেন। 

কিন্তু গত ৮ এপ্রিল কারও অনুমতি ছাড়াই নিজের আবেদনের বিপরীতে গিয়ে বিদ্যালয়টি মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিমপাড়ে তারাবর মৌজার ভেলামারীতে স্থানান্তর করেন রফিকুল ইসলাম। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের এমন সিদ্ধান্তকে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ দাবি করেছেন। স্থানান্তরিত অংশে না গিয়ে আগের স্থানেই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলমান রেখেছেন তারা। এত কার্যত দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টি।

সহকারী শিক্ষকদের অভিযোগ, ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম পাড়ে যেখানে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়েছে, ওই এলাকায় প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বাড়ি। এছাড়া তার ভাগিনাকে বিদ্যালয়ের দফতরি কাম নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ দেওয়ার সুবিধার্থে তিনি নিজ এলাকায় বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের চক্রান্ত করেছেন। কিন্তু ওই এলাকায় বসতি খুবই কম এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যাও অনেক কম হবে।

গত ২৮ মে ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম পাড়ে (প্রধান শিক্ষকের অংশে) স্থানান্তরিত শংকর মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ওইদিন পশ্চিম পাড়ের অংশে শিক্ষার্থী এসেছে ১৩ জন। অন্য কোনও শিক্ষক বিদ্যালয়ের ওই অংশে আসেননি। সাংবাদিক আসার খবরে ছুটে আসেন রফিকুল ইসলাম।

এদিকে একই দিন বিদ্যালয়ের আগের জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, ওই অংশে টিনের ঘর তুলে পাঠদান চালু রেখেছেন সহকারী শিক্ষকরা। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।

সহকারী শিক্ষক কল্পনা খাতুন, নজরুল ইসলাম, গোলাপী খাতুন, মমতাজ খাতুন, আমিনুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান জানান, গত ৯ এপ্রিল তারা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেন, টিনশেড ঘর ও আসবাবপত্রসহ কিছুই নেই। পরে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানালে তারা স্থানীয়দের সহায়তায় পাঠদান চালু রাখেন। সে অনুযায়ী ক্যাচমেন্ট এলাকার পূর্ব বিলপাড়ায় বিদ্যালয়টির নির্ধারিত স্থানে পাঠদান চলছে। প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় খোলা আকাশের নিচে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান করাতে হচ্ছে।

তাদের অভিযোগ, অনুমতি ছাড়াই প্রধান শিক্ষক একাধিকবার বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ভেঙে অন্যত্র নেওয়াসহ মালামাল আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের নামে জমি কেনার কথা বলে সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজের নামে দলিল করেছেন। অপকর্ম ঢাকতে নিজের স্ত্রীকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বানিয়েছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সহকারী শিক্ষক ও অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।

দুই জায়গায় পাঠদান চলার বিষয়টি স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালযের সব সহকারী শিক্ষকের বাড়ি উপজেলা শহরে। তারা এই দুর্গম এলাকায় আসতে চান না। এ কারণে বিদ্যালয় স্থানান্তরে বাঁধা দিচ্ছেন।’

সহকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের মধ্যে কেউ কেউ উপজেলা শহরে কোচিং সেন্টার খুলে নিয়েছেন। বিদ্যালয়টি চরে স্থানান্তর হলে তারা এই সুযোগ হারানোর ভয়ে এতে সায় দিচ্ছেন না।’

রাজীবপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা কমিটি ছাড়া এখানে আমার করার কিছুই নেই। শিক্ষা কমিটি আমাকে এ ব্যাপারে  সিন্ধান্ত নিতে নিষেধ করেছেন।’

স্কুলের পাঠদান ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয় চলবে কি চলবে না, তা ম্যানেজিং কমিটি সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা (ম্যানেজিং কমিটি) চাইলে স্কুল বন্ধ করেও দিতে পারেন।’  

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমার কাছেও মনে হয়েছে, এটা প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কমিটির সঙ্গে বসে সমাধান করা হবে।’

Source link

Related posts

ঝিনাইদহে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৩, উপসর্গে ৮ জনের মৃত্যু

News Desk

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রাজেক আহমেদ আর নেই

News Desk

অপারেশনের সময় অজ্ঞান করার পর আর জ্ঞান ফেরেনি শিশুটির

News Desk

Leave a Comment