খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার তালিকাভুক্ত কার্ডধারী ৫৩ শতাংশ জেলেই মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকারের খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। খুলনা অঞ্চলে কার্ডধারী জেলের সংখ্যা ৯৫ হাজার ২৫৯ জন। এর মধ্যে সমুদ্রগামী ৪৪ হাজার ৫৯৩ জেলে বন্ধকালীন তিন মাস সরকারের খাদ্য সহায়তা পেয়ে থাকেন। যা মোট জেলের ৪৭ শতাংশ। বাকি ৫৩ শতাংশ জেলে এ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব কুমার বলেন, ‘খুলনা জেলার ৯টি উপজেলা এলাকায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৪৮ হাজার ২৭ জন। বন্ধকালীন সরকারের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় থাকা সাতটি উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪১ হাজার ১৬৩ জন। এর মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে ২৩ হাজার ৭৭ জন। নিষেধাজ্ঞার তিন মাসে সমুদ্রগামী জেলেরাই সরকারের খাদ্য সহায়তার ৮৬ কেজি করে চাল পেয়ে থাকেন। যা ভিজিএফ প্রকল্প থেকে দুই দফায় দেওয়া হয়। চলতি বছরের শেষ হওয়া তিন মাস বন্ধের চাল প্রথম দফায় গত ২ মে ৫৬ কেজি ও দ্বিতীয় দফায় গত ১ জুলাই ৩০ কেজি সরবরাহ করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের এ সহায়তা শুধু সমুদ্রগামী জেলেরাই পেয়ে থাকেন। দুই দফায় ১৯৮৪ দশমিক ৭১২ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। নিবন্ধিত সব জেলের কার্ড থাকলেও সবাই এ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত নন। তাই নিবন্ধিত জেলেদের অর্ধেকেরও বেশি খাদ্য সহায়তা পান না।’
গৌরম্ভার জেলে পরিবারের রশিদা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর জেলে কার্ড থাকার পরও মাছ ধরা বন্ধের সময়ে সরকারের খাদ্য সহায়তা পাই না।’
তানিয়া বেগম নামে আরেকজন বলেন, ‘স্বামীর জেলে কার্ড ছিল। দুই বছর আগে খাদ্য সহায়তা না দিয়ে কার্ড রেখে দেওয়া হয়। সে কার্ড আজও দেওয়া হয়নি। খাদ্য সহায়তাও আমরা পাই না।’
জেলে মাজহারুল হক বলেন, ‘১১ বছর আগে জেলে কার্ড পেয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও খাদ্য সহায়তা পাইনি।’
কয়রার কাশিয়াবাদ এলাকার জেলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সময়মতো খাদ্য সহায়তা না দিলে সংসার চলে না। তাই বন্ধ চলাকালেই খাদ্য সহায়তা প্রদানে জেলেরা বেশি উপকৃত হতে পারে। তাহলে ধারদেনার চাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে। কার্ড থাকা সব জেলেকে এই খাদ্য সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। জেলে জেলেই, নদী আর সমুদ্র ভাগ করে জেলেদের একাংশকে খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা ভালো দেখায় না।’
খুলনা জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলায় নিবন্ধিত চার হাজার ৪০৯ জেলের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে দুই হাজার ৪৯, দাকোপে নিবন্ধিত ৯ হাজার ৩২৭ জেলের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে পাঁচ হাজার ৯৭, পাইকগাছায় নিবন্ধিত চার হাজার ৮৯৮ জেলের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে এক হাজার ৯৫০, কয়রায় নিবন্ধিত ১৩ হাজার ২৬৪ জেলের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে ১৩ হাজার ৮৫, ডুমুরিয়ায় নিবন্ধিত পাঁচ হাজার ৪৯৮ জন জেলের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে ৬৬৫, দিঘলিয়ায় নিবন্ধিত দুই হাজার ৮২০ জেলের মধ্যে সমুদ্রগামী মাত্র ৬ জন ও রূপসা উপজেলায় নিবন্ধিত ৯৪৭ জেলের মধ্যে সমুদ্রগামী ২২৫ জন।
খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনার সাতটি উপজেলার পাশাপাশি বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার উপকূলীয় আরও পাঁচ উপজেলার জেলেরা মাছ ধরা বন্ধের সময় সরকারের খাদ্য সহায়তা পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে বাগেরহাটের তিন উপজেলার (মোংলা, শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জ) নিবন্ধিত ২৩ হাজার ৪২ জন জেলের মধ্যে সমুদ্রগামী আট হাজার ৬৩৪ জেলেকে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার নিবন্ধিত ৩১ হাজার ৫৪ জেলের মধ্যে সমুদ্রগামী ১২ হাজার ৮৭৯ জনকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় মৎস্য উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তিন মাসের জন্য খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার উপকূলীয় ১২টি উপজেলায় সমুদ্রগামী ৪৪ হাজার ৫৯৩ জন জেলের মাঝে গত ১৫ জুন প্রথম কিস্তিতে দুই হাজার ৪৯৭ দশমিক ২০৮ মেট্রিক টন ও ২৯ আগস্ট দ্বিতীয় কিস্তিতে এক হাজার ৩৩৭ দশমিক ৭৯০ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়। নিবন্ধিত জেলে বেশি থাকলেও শুধু সমুদ্রগামী জেলেদের এ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়।’
/কেএইচটি/এফআর/