কুষ্টিয়ার মিরপুরে আহত অবস্থায় একটি গন্ধগোকুল উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (২০ মে) বিলুপ্তপ্রায় এই বন্য প্রাণীটিকে উদ্ধার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে এটি উপজেলা বন কর্মকর্তার হেফাজতে রয়েছে। এর আগে রবিবার (১৯ মে) রাত ১১টার দিকে উপজেলার সিংপুর গ্রাম থেকে আহত অবস্থায় স্তন্যপায়ী এই প্রাণীটিকে উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় সিংপুর গ্রামের কৃষক উসমান গনি বলেন, ‘রবিবার রাত ১১টার দিকে আমার লিচুবাগানে বিরল একটি প্রাণী দেখতে পাই। পরে সেটিকে আটক করে নিয়ে আসা হলে স্থানীয়রা জানান, এটি বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী গন্ধগোকুল। পরে এটিকে স্থানীয় এক শিক্ষকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’
মিরপুর ইংলিশ ভার্সন স্কুলের (মেভস) অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মজিবুল হক বলেন, ‘রবিবার রাতে আমরা মোটরসাইকেলে পার্শ্ববর্তী ভেড়ামারা এলাকা থেকে ফেরার পথে মিরপুর উপজেলার সিংপুর গ্রামের মধ্যে মানুষের একটি জটলা দেখতে পাই। পরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিলুপ্ত প্রজাতির একটি গন্ধগোকুলকে বাঁশের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে।
‘পরে আহত গন্ধগোকুলটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা বন কর্মকর্তার কাছে এটিকে হস্তান্তর করা হয়। বন্য এই প্রাণীটি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। বেঁধে রাখার কারণে পেছনের দুই পা দিয়ে চলাফেরা করতে পারছে না।’
মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার এসএম মাহমুদুল হক বলেন, ‘সোমবার সকালে আহত অবস্থায় একটি গন্ধগোকুল নিয়ে আসা হয়। পরে প্রাণীটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার পেছনের দুটি পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।’
মিরপুর উপজেলা সহকারী বন কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘মিরপুরে বিলুপ্ত প্রজাতির ছোট একটি গন্ধগোকুল উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সকালে বিলুপ্ত প্রজাতির এই বন্য প্রাণীটিকে উদ্ধার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর আগে রবিবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ধুবইল ইউনিয়নের সিংপুর নামক স্থান থেকে উৎসুক জনতার হাত থেকে গন্ধগোকুলটি আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।’
স্থানীয়দের বরাত দিতে এই বন কর্মকর্তা বলেন, ‘গন্ধগোকুলটি ফল খাওয়ার জন্য লিচুবাগানে গেলে জালে আটকে যায়। পরে সোমবার সকালে সেটিকে উপজেলা বন অধিদফতরে হস্তান্তর করা হয়। সোমবার প্রাণীটিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সুস্থ হলে এটি উপজেলা চত্বরে লিচুবাগানে অবমুক্ত করা হবে।
তিনি আরও জানান, স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রাণী গন্ধগোকুল বর্তমানে সংরক্ষিত প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। পুরনো গাছ, বন-জঙ্গল কমে যাওয়ায় দিন দিন এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে এই প্রাণীটি। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রাণীটি সংরক্ষিত।
জানা গেছে, গন্ধগোকুল নিশাচর প্রাণী। খাটাশের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এরাই মানুষের বেশি কাছাকাছি থাকে। দিনের বেলা বড় কোনও গাছের ভূমি সমান্তরাল ডালে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে, লেজটি ঝুলে থাকে নিচের দিকে। মূলত ফলখেকো হলেও কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম, পাখি, ছোট প্রাণী, তাল-খেজুরের রসও খায়। অন্য খাদ্যের অভাবে মুরগি, কবুতর ও ফল চুরি করে। এরা ইঁদুর ও ফল-ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে। ধূসর রঙের এই প্রাণীটির অন্ধকারে অন্য প্রাণীর গায়ের গন্ধ শুঁকে চিনতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। প্রায় পোলাও চালের মতো তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। একসময় এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে একই রকম ঘ্রাণের কৃত্রিম বিকল্প সুগন্ধি তৈরি হয়।