Image default
বাংলাদেশ

বিশুদ্ধ পানির হাহাকার বোয়ালখালীতে

গত প্রায় দুইমাস ধরে পানির সংকটে বোয়ালখালীবাসী। একদিকে শুষ্ক মৌসুম আর অনাবৃষ্টিতে খাল, বিল, পুকুর শুকিয়ে চৌচির। অন্যদিকে, পানি বোতলজাতকরণ কোম্পানির অনবরত ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন এ সংকটকে চরম আকারে নিয়ে গেছে। যতই দিন গড়াচ্ছে, ততই নিচে চলে যাচ্ছে পানির স্তর। অকেজো হয়ে পড়েছে উপজেলার হাজার হাজার নলকূপ। সাবমারসিবল নলকূপ যেখানে আছে, সকাল-সন্ধ্যা ওইস্থানে পানির জন্য দীর্ঘ লাইন এখন নিত্য ঘটনা। অপরদিকে আর্থিক সচ্ছলরা বোতলজাত পানির উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। প্রচ- খরতাপ, ভ্যাপসা গরম ও পানি সংকটে প্রতিটি গ্রামে নেমে এসেছে অসহনীয় দুর্ভোগ। বৃহস্পতিবার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

বোয়ালখালী পৌর মেয়র আবুল কালাম আবু পূর্বকোণকে জানান, পৌর এলাকায় কনফিডেন্স, এসএ গ্রুপ ও এন মোহাম্মদ গ্রুপ বোতলজাত পানি উৎপাদন করছে তাদের নিজস্ব কারখানায়। এছাড়া হক্কানি গ্রুপ, রিজেন্ট টেক্সটাইলস মিল ও সিএফএল পানি উত্তোলন করে কারখানা ও অন্যত্র সরবরাহ করছে। এতে নিজেদের জমির ভূগর্ভে পানি থাকা সত্ত্বেও বোতলজাত পানি কিনে খেতে হচ্ছে বোয়ালখালীবাসীকে। এর চেয়ে দুঃখের কি আর হতে পারে! তিনি দাবি করেন, পৌর এলাকায় আদর কমিউনিটি সেন্টার এখন অবৈধভাবে পানির পাম্প বসিয়েছে। কোন ক্ষমতাবলে তারা একাজ করছে এলাকাবাসী জানতে চায়। তাদের কারণে গোমদ-ীতে পানির সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এদিকে উপজেলার পোপাদিয়ায় নতুন করে জিকু ওয়াটার নামে একটি প্রতিষ্ঠান বোতলজাত পানি উৎপাদন শুরু করেছে গত দু’মাস আগে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য কিশোর ভঞ্জ অভিযোগ করে বলেন, ইতিহাসে কখনও নলকূপে পানি পাওয়া যায়নি এমন ঘটনা হয়নি। এখন পানির জন্য হাহাকার। জিকু মিনারেল ওয়াটার উৎপাদন শুরুর পর থেকে আমরা ভূ-গর্ভস্থ পানি পাচ্ছি না। কষ্টে আছি। চরণদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শামসুল আলম বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াতে এ কঠিন পরিস্থিতি। তিনি বলেন, চরণদ্বীপ দরবারের আশপাশে একাধিক ভূ-গর্ভস্থ পানির পাম্প বসিয়েছেন এক ব্যক্তি। এগুলোর অনুমতি নিতে হয়। তিনি নেননি। এগুলো বসানোর পর থেকে চরণদ্বীপে পানির সমস্যা প্রকট হয়েছে।

এদিকে বোয়ালখালীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিল্লুর রহমান ভূ-গর্ভস্থ পানি না পেয়ে পুকুর খালের অনিরাপদ পানি পান করাকে দুষছেন। স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক মঞ্জুর মোরশেদ তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন, ‘এক ঢিলে দুই পাখি। বোতলের পানি কোম্পানিগুলো এখন বোয়ালখালীতে। বোতলের পানি শুষে নিচ্ছে বোতলীরা। নলকূপে পানি নেই। কারবালার হাহাকার। বোতলের পানি কিনে খেতে হচ্ছে লাখো মানুষকে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোয়ালখালীতে মোট গভীর নলকূপ রয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসেব মতে ৩৭৯৮টি। অগভীর নলকূপ প্রায় ৫০ হাজারের অধিক। গত দু’ মাসে সব অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। গভীর নলকূপগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেশিরভাগ বসানোর কারণে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী মেকানিক মোহাম্মদ নাছের বলেন, আমাকে প্রতিদিন গড়ে ১০টি গভীর নলকূপ চেক, মেরামত করতে হয়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, পানি সংকটের জন্য পাম্প ও অনাবৃষ্টি দুটিই কারণ। তিনি বলেন, স্বাভাবিক ২ থেকে ২৮ ফুটের মধ্যে লেয়ার থাকলে চাপা কলের মাধ্যমে পানি তোলা যায়। এখন সেই স্তর নেমে গিয়ে ৩২ থেকে ৩৫ ফুটে ঠেকেছে। যে কারণে মানুষ পানি সংকটে পড়ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সুদর্শী দেওয়ান জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ তৈরি করছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুন নাহার বলেন, শিল্প কারখানা ও বোতলজাত কোম্পানিগুলোকে নিয়ে রবিবার (আজ) বসব। তাদের কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হবে। অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলেছি।

Related posts

বন্দরে দুই দিনে ৯ হাজার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন

News Desk

ময়নাতদন্তে জানা গেলো স্কুলেই শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা

News Desk

করোনায় ৩৪ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮৮৭

News Desk

Leave a Comment