Image default
বাংলাদেশ

বৃষ্টির পানিতে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সারাদেশের ন্যায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকাল থেকে শুক্রবার (২৮ মে) ভোর পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার নিম্নাঞ্চলের অনেক ধানখেত। কয়েকটি বিল থেকে ভেসে গেছে কৃষকদের কেটে রাখা ধান। বেশিরভাগ কৃষকের ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেকের আঁটি বেঁধে রাখা ধান ভেসে গেছে পানির স্রোতে। জেলার সদর উপজেলার শংকোপুরায় অর্ধশতাধিক কৃষকের কয়েক বিঘার জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের গুনিরমোড় গ্রামের শংকোপুরা বিলে শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো বিলে শুধু পানি আর পানি। অথচ বৃহস্পতিবার সকালেও বিলের বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে ছিল ধান। এই বিলের বেশিরভাগ ধান কেটে রাখা হয়েছিল শুকানোর জন্য।

এসব ধানের সবগুলোই বেঁধে রাখা হয়েছিল। প্রায় শেষ মুহূর্তে এসে বৃষ্টির পানিতে ধান ভেসে যাওয়ায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো শংকোপুরা বিলের ধানচাষিরা। অনেকের মোট ধানের প্রায় সিংহভাগই ভেসে গেছে পানিতে। কৃষকরা জানান, বেশিরভাগ ধান গভীর রাতে নদীতে ভেসে গেছে। এই গ্রামের অনেকেই আবার এসব ভেসে যাওয়া ধান সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে এসেছেন। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা গেছে, ভেসে যাওয়া ধান সংগ্রহে ব্যস্ত অনেক কৃষক। শংকোপুরা বিলের কৃষক মহরম আলী জানান, এই বিলের অন্তত কয়েকশ বিঘা জমির ধান কেটে ও বেঁধে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সারাদিন-রাতের টানা বৃষ্টিতে পুরো বিলের ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বেশিরভাগই ধান ভেসে চলে গেছে পানির স্রোতে। পানি নামার কোনো সুবব্যস্থা না থাকার কারণেই এই সমস্যা হয়েছে।

পাশের গ্রাম ঘুঘুডিমার কৃষক মুক্তার আলী বলেন, এই বিলে সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ধান চাষাবাদ করেছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার সারাদিন ও রাতের বৃষ্টিতে দুই বিঘা জমির সম্পূর্ণ ধান ভেসে গেছে। দিনব্যাপী বৃষ্টির কারণে কেটে রাখা ধানগুলো নিরাপদে সরিয়ে নিতেও পারিনি। শুক্রবার সকালে এসে দেখছি ২ বিঘা জমির একটা ধান নেই। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে কাবির আলী। বাবার তলিয়ে যাওয়া ধান সংগ্রহ করতে মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে বিলে এসেছে সে। সকাল থেকে বুকসমান পানিতে হেঁটে হেঁটে বাবার সঙ্গে ধান রাস্তার পাড়ে নিয়ে আসছে কাবির। সে জানায়, বাবা কয়েকদিন থেকেই মাঠ থেকে ধানগুলো নিয়ে যাব যাব করছে। কিন্তু গরুর গাড়ি না পাওয়ায় নিয়ে যেতে পারছে না। শনিবার গরুর গাড়িতে ধানগুলো বোঝায় করে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হল না।

মাদরাসা শিক্ষক আকতারুল ইসলাম বলেন, বিলে চাচার ২ বিঘা ধান ছিল। বৃষ্টির পানিতে সব ধান তলিয়ে গেছে। সঙ্গে ৩ ভাই ও চাচাকে নিয়ে এখন তলিয়ে যাওয়া ধানগুলো জালে করে ভাসিয়ে রাস্তার ধারে নিয়ে আসছি। এ বছর বিলের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু দিনব্যাপী হওয়া বৃষ্টির পানিতে ধান তলিয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক কৃষক। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় বেশিরভাগ ধান ঘরে উঠেছে। তবে হঠাৎ করে সারাদিন ও রাতের বৃষ্টিতে কয়েক জায়গায় কেটে স্তূপ করে রাখা ধান তলিয়ে ও ভেসে যাওয়ায় খবর পেয়েছি। উল্লেখ্য, জেলায় এ বছর ৪৯ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে এবং ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।

Related posts

প্লাস্টিক হ্যাঙ্গারের নামে ব্রান্ডের বিদেশি সিগারেট, জব্দ

News Desk

পবিত্র রমজান মাসে অফিস চলবে ৯টা থেকে সাড়ে ৩টা

News Desk

বরখাস্তের ২ মাস পর তথ্য বাতায়ন থেকে সরলো কর্মকর্তার নাম

News Desk

Leave a Comment