রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, ও পটুয়াখালী জেলাগুলোর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, চাঁদপুর, বান্দরবান, জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় গরম থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টি কামনা করে নামাজ আদায় করেছেন বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা।
নারায়ণগঞ্জ
বুধবার বেলা ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। তীব্র গরম উপেক্ষা করে নামাজে অংশ নেন শতাধিক মুসল্লি। এতে ইমামতি করেন দাতা সড়কের বড় মসজিদের খতিব আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে মানুষ হাহাকার করছে। মহান আল্লাহ কোনও কারণে আমাদের ওপরে নারাজ হয়েছেন। এ কারণে বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ রেখেছেন। আজকে মহান আল্লাহর কাছে বৃষ্টি বর্ষণের জন্য মুসল্লিদের নিয়ে নামাজ আদায় করেছি। নামাজ শেষে অনাবৃষ্টি এবং গরম থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর রহমত কামনা করে মোনাজাত করেছি।’
নামাজে অংশ নেওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে মহান আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে নামাজ আদায় শেষে দোয়া করেছি আমরা।’
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জে তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পঞ্চগড়
বাংলা ট্রিবিউনের পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তীব্র গরম থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টি কামনা করে নামাজ আদায় করেছেন জেলার ধর্মপ্রাণ মানুষ। নামাজ শেষে বৃষ্টি চেয়ে দোয়া করেছেন তারা। সকালে সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের তালমা ঈদগাহ মাঠে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি ইসতিসকার নামাজ আদায় করেন। নামাজে ইমামতি করেন চট্টগ্রামের জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম মাদ্রাসার প্রধান মুফতি মো. আইয়ুব বিন কাশেম। এতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল প্রধান, মাদ্রাসার ছাত্র, ব্যবসায়ী, কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তীব্র গরম থেকে মুক্তি পেতে বৃষ্টি চেয়ে কান্নাকাটি করেন মুসল্লিরা। ইমাম মো. আইয়ুব বিন কাসেম বলেন, ‘অনাবৃষ্টি ও তাপপ্রবাহের কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এ অবস্থায় আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমরা নিরুপায়। তাই গরম থেকে মুক্তি পেতে বৃষ্টির আশায় নামাজ আদায় করেছি। নামাজ শেষে আমরা মহান আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে কান্নাকাটি করেছি।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন, ‘এপ্রিল তীব্র গরমের মাস। প্রতিদিনই তাপমাত্রা বাড়ছে। মঙ্গলবার পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার বিকাল ৩টায় রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।’
রাজবাড়ী
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পেতে গোয়ালন্দে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। বুধবার সকাল ১০টায় গোয়ালন্দ পৌর এলাকায় আল-জামিয়া নিজামিয়া আরাবিয়া কওমি মাদ্রাসা মাঠে এ নামাজ আদায় করা হয়। মাওলানা আমিনুল ইসলামের ইমামতিতে নামাজে অংশ নেন উপজেলার মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শতাধিক মুসল্লি।
মুসল্লিরা জানান, টানা কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রখর রোদের কারণে জীবিকা নির্বাহের জন্য বাইরে বের হতে পারছেন না শ্রমজীবী মানুষ। বৃষ্টি না হওয়ায় ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টি চেয়ে আল্লাহর দরবারে দুই রাকাত নামাজ আদায় ও বিশেষ দোয়া করা হয়।
আল-জামিয়া নিজামিয়া আরাবিয়া কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক মো. শামসুল হুদা বলেন, ‘প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পেতে দুই রাকাত ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়। মূলত এটি সুন্নত আমল। ঈদের নামাজের মতো নামাজ শেষে খুতবা পাঠ করা হয়। তারপর আল্লাহর দরবারে বৃষ্টির জন্য দোয়া কামনা করা হয়।’
উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম ও পৌর ইমাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুফতি আজম আহমাদ বলেন, ‘তীব্র খরার কারণে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়ছে। জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব পড়েছে। এজন্য আমরা নামাজ পড়লাম।’
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে তাপপ্রবাহে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। কমছেই না তাপমাত্রার পারদ। উল্টো দিন দিন বাড়ছে। বৃষ্টির আশায় প্রহর গুনছে মানুষ। এ অবস্থায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। সকালে শহরের ওয়াজির আলী স্কুল মাঠে জেলা ইমাম পরিষদের আয়োজনে নামাজ আদায় করা হয়। এতে শহরের বিভিন্ন এলাকার শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন।
নামাজের ইমামতি করেন শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব শায়েখ মুহাম্মদ সাঈদুর রহমান। নামাজ শেষে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে মোনাজাত করা হয়। মুসল্লিরা কেঁদেকেটে আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে বৃষ্টি বর্ষণের জন্য দোয়া করেন।
দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মানুষ পানির জন্য খুব বিপদে আছে উল্লেখ করে শায়েখ মুহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টির জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) সালাতের মাধ্যমে প্রার্থনা করতে বলেছেন। রাসুল (সা.) এই নামাজের সময় দু-হাত উল্টো করে মোনাজাত করতেন। তার মানে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চেয়েছেন। আমরাও রাসলের মতো করে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করেছি।’
বগুড়া
বগুড়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৈশাখের শুরু থেকেই তীব্র গরমে নিম্নআয়ের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পেতে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন জেলা সদরের গোকুল এলাকার মুসল্লিরা। দুপুর ২টায় সদরের গোকুল তছলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন। এতে ইমামতি করেন গোকুল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের খতিব মাওলানা মো. আমিনুর ইসলাম।
মাওলানা মো. আমিনুর ইসলাম বলেন, ‘আমরা যে পরিস্থিতিতেই থাকি না কেন আল্লাহর কাছে ধরনা দেবো। তিনি যেন রহমত বর্ষণ করেন। এজন্য আমরা আল্লাহর কাছে দয়া ভিক্ষা চাইছি। রাসুলের সুন্নাহ অনুযায়ী আমরা ফাঁকা মাঠে এসেছি, আমাদের অপরাধ স্বীকার করলাম। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বৃষ্টি চাইলাম।’
গত কয়েকদিন বগুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। বুধবার জেলায় সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ তারেক আজিজ বলেন, ‘গত ১৬ এপ্রিল থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। গত ২১ এপ্রিল জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। বুধবার বিকাল ৩টায়
তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও সকাল ৬টায় ২৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।’
মোংলা
বাগেরহাটের মোংলায় তীব্র তাপপ্রবাহের সঙ্গে অসহনীয় রোদ আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। তীব্র গরম থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে পৌর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদ গাহ মাঠে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১০টায় বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ আদায় করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। মোংলা ইমাম পরিষদের উদ্যোগে এবং পৌর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এ নামাজে সব শ্রেণি-পেশার কমপক্ষে দুই হাজার মুসল্লি অংশ নেন।
ইসতিসকার (বৃষ্টির জন্য যে নামাজ আদায় করা হয়) নামাজে ইমামতি করেন মোংলা ইমাম পরিষদের সভাপতি ও বি এল এস মসজিদের খতিব ও ইমাম হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিম। নামাজ শেষে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলা তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়।
ইসতিসকার নামাজ কী?
ইসতিসকা শব্দের অর্থ পানির জন্য প্রার্থনা করা। খরা বা দাবদাহের অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আকুতি ভরে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে হয়। এই নামাজকে ইসতিসকার নামাজ বলে। পরপর তিন দিন ইসতিসকার নামাজ পড়া সুন্নত। যদি ইতোমধ্যে বৃষ্টি হয়েও যায়, তবু তিন দিন করা উত্তম। এই তিন দিন নফল রোজা রাখা মুস্তাহাব।
ইসতিসকার নামাজের সময়: সূর্যোদয়ের পর ২০ মিনিটের মতো সময় অতিবাহিত হলে ইসতিসকার নামাজ পড়তে হয়, এটি ইশরাক নামাজ ও ঈদের নামাজের সময়ের মতো। এই নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি বা পানির জন্য প্রার্থনা করা হয়।