বেঁচে থাকার প্রতিটি মুহূর্ত তাদের কাছে যন্ত্রণার
বাংলাদেশ

বেঁচে থাকার প্রতিটি মুহূর্ত তাদের কাছে যন্ত্রণার

সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার নয় বছর পূর্ণ হয়েছে। সেদিন কেউ বাবা-মা, কেউ ভাই-বোন, কেউ স্ত্রী-সন্তান ও স্বামী হারিয়েছেন। ভয়াবহ এই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেলেও কেউ কেউ কাটাচ্ছেন দুর্বিষহ জীবন। আজও ক্ষত শুকায়নি আহত অনেক শ্রমিকের। অনেকেই ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে।

সরকারি কিছু অনুদান পেলেও তার বেশিরভাগই খরচ হয়েছে চিকিৎসার পেছনে। কোনোরকমে দুই ‍মুঠো খেয়ে বেঁচে আছেন অনেকে। কিন্তু সেই বেঁচে থাকার প্রতিটি মুহূর্ত তাদের কাছে যন্ত্রণার। সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা আর মানসিক যন্ত্রণা প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তাদেরই একজন নিলুফা বেগম। নয় বছর উপলক্ষে শনিবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে আসেন। সেখানে কথা হয় তার সঙ্গে।

আরও পড়ুন: ক্ষতিপূরণ পাননি স্বজনরা, হয়নি রানার বিচার

নিলুফা বেগম জানান, সাভার পৌর এলাকার আমতলা মহল্লায় স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। কাজ করতেন রানা প্লাজার আট তলার প্যান্টন অ্যাপারেলস কারখানার সুইং অপারেটর হিসেবে। স্বামী ও তার রোজগারে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল তাদের জীবন এলোমেলো হয়ে যায়। ঘটনার আগের দিন ভবনে ফাটলের বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন। তাই কাজে যেতে চাননি। কিন্তু সুপারভাইজারের ফোন ও বেতন আটকে দেওয়ার হুমকি পেয়ে যেতে বাধ্য হন। সেই যাওয়াই তার কাল হয়।

ভবন ধসের সময় একটি বিম নিলুফার ডান পায়ে পড়ে বিভিন্ন জায়গা ভেঙে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। প্রায় সাড়ে নয় ঘণ্টা আটকে থাকার পর তাকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় হাসপাতালে। সরকারিভাবে তিনি সহযোগিতা পেয়েছিলেন। তার বেশিরভাগই ব্যয় হয়েছে চিকিৎসার পেছনে। অনেক চেষ্টা করেছেন পা ঠিক করার, কিন্তু সুস্থ হননি। পায়ে পচন ধরেছে। চিকিৎসকরাও পা কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু টাকার অভাবে এখনও পা কেটে ফেলারও ব্যবস্থা করতে পারেননি নিলুফা। ক্রাচে ভর করে হাঁটা-চলা করতে হয়। 

নিলুফা বলেন, ‘স্বামীর একার আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। সে কারণেই একটু ভালোভাবে সংসার চালানোর আশায় কাজ নিই পোশাক কারখানায়। চাকরি নেওয়ার পর ভালই চলছিল সংসার। তবে রানা প্লাজার ধসে স্বপ্ন শেষ। এখন অন্যের ওপর বোঝা হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। এর চেয়ে মৃত্যু ভালো।’

আরও পড়ুন: ‘ক্ষতিপূরণে’ ক্ষতি পূরণ হয়?

রানা প্লাজার মৃত্যুকূপ থেকে বেঁচে ফেরা আরেক শ্রমিক শিলা বেগম। কাজ করতেন রানা প্লাজার ছয় তলার ইথার টেক্স কারখানায় অপারেটর পদে। প্রায় দুই বছর ধরে কাজ করছিলেন। তার সংসারও চলে যাচ্ছিল। কিন্তু একই ঘটনায় নিলুফার মতো তারও সব শেষ হয়ে গেছে। 

প্রাণে বেঁচে গেলেও কেউ কেউ কাটাচ্ছেন দুর্বিষহ জীবন

শিলা বেগম বলেন, ‘ভবনের বিমের নিচে চাপা পড়ি। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথম দিকে কিছু টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু সেই টাকায় চিকিৎসাও ঠিকমতো হয়নি। টাকার অভাবে সন্তানের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। কোনোরকম দুই মুঠো খেয়ে বেঁচে আছি। টাকার অভাবে এখন চিকিৎসা বন্ধ।’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘রানা প্লাজার নয় বছর পার হলেও কোনও শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। ভবন ধসের ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া অধিকাংশ আহত শ্রমিক দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। কারও হাত কেটে ফেলতে হয়েছে, কারও পা কাটা পড়েছে, আবার কারও পা থাকলেও তাতে পচন ধরেছে। সবাই প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। তিনি আহত সব শ্রমিকের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানান।

Source link

Related posts

৪০ পরিবার দিনে উৎপাদন করছে ৬০ মণ মুড়ি

News Desk

আগামী বাজেটে যেসব বিষয় দেখা উচিত

News Desk

নেপালের রাষ্ট্রদূতের কাছে করোনার চিকিৎসা সামগ্রী হস্তান্তর

News Desk

Leave a Comment