বেড়েছে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি
বাংলাদেশ

বেড়েছে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি

রাঙামাটিতে বর্ষা মানেই পাহাড় ধসের শঙ্কা। কিন্তু মৃত্যুঝুঁকি জেনেও বেড়েছে পাহাড়ের ঢালে বসবাস। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি। জানা গেছে, নাগরিক সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ের পাদদেশে বসতি নির্মাণে আগ্রহ বেড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষদের।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পাঁচ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার লোক পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। শহরের ৩১টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রাঙামাটি সদরের শিমুলতলী, রূপনগর, যুব উন্নয়ন ও রাঙাপানি এলাকা এবং কাপ্তাই, কাউখালী, নানিয়ারচরসহ প্রায় সব উপজেলাতেই ঝুঁকিপূর্ণ বসতি দেখা যায়। অথচ পাহাড়ে ২০১৭ সালের ভয়াবহ ধসের চিহ্ন এখনও দৃশ্যমান। ২০১৭ সালে পাহাড় ধসে ১২০ জনের এবং ২০১৮ সালে ১১ জনের মৃত্যু হয় জেলায়। কিন্তু সেই সব স্থানে আবারও বসবাস করছে মানুষ।

স্থানীয়দের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে পাহাড় ধসের পরে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি বেড়েছে কয়েকগুণ। এসব এলাকায় বেড়েছে নাগরিক সুবিধা। প্রশস্ত সড়কের পাশাপাশি পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। ফলে সাত বছরে জায়গার দাম বেড়েছে শতগুণ। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে প্রতিনিয়তই বাড়ছে বসতি। মারাত্মক ঝুঁকি জেনেও নিজেদের বসতবাড়ি ছাড়তে রাজি নন বসবাসকারীরা।

সদর উপজেলার শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা মো. মিঠু জানান, এই এলাকার যারা বসবাস করে তারা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অন্য জায়গায় থাকার সুযোগ নেই। আবার শহরে থাকতে গেলে অনেক টাকা ঘরভাড়া লাগে। তাই তারা বাধ্য হয়েই এখানে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন।

রূপনগর এলাকার আরেক বাসিন্দা ওমর ফারুক জানান, এসব জায়গা স্থানীয় বাঙালি অথবা পাহাড়িদের কাছ থেকে কিনে নেওয়া হয়েছে। আবার অনেকে খাস জমিতে অনেকে বসবাস করছেন। ২০১৭ সালের পর এসব এলাকার জায়গার দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। মানুষ টাকা দিয়েও জায়গা পাচ্ছে না।

যুব উন্নয়ন এলাকার বাসিন্দা মঙ্গল চাকমা বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম ছাড়া তেমন সমস্যা হয় না। বেশি বৃষ্টি হলে আশেপাশের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাই। ২০১৭ সালের পর আর পাহাড় ধস হয়নি। এখন অনেকের মধ্যে সেই ভয় কেটে গেছে। কেউ আর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতেও চায় না।’

ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ রাঙামাটি দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘পাহাড়ে বসতি স্থাপনকারীদের বেশির ভাগই স্বল্প আয়ের মানুষ। এই অবৈধ স্থাপনা যখন গড়ে ওঠে তখন নজরদারি করলে বর্তমানে এমন পরিস্থিতি হতো না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে পাহাড়ে এমন বসতি গড়ে উঠেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাঙামাটির স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে হবে। তাদের জন্য নিরাপদ বসতি নির্মাণের উদ্যোগ না নিলে প্রতি বছর বর্ষায় এমন দৌড়াদৌড়ি করতে হবে সবাইকে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘যারা পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তাদের নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাব পাঠাবো।’

তিনি জানান, পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ এবং খাস জমি কেনাবেচার তথ্য পেলে প্রশাসন সব সময় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

 

Source link

Related posts

করোনা,চট্টগ্রামে ৩ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১৩৭

News Desk

বগুড়ার চার আসনে বিএনপির সাবেক ৪ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী, জানালেন ক্ষোভ

News Desk

বিকাশ-রকেটে আনা যাবে রেমিট্যান্স

News Desk

Leave a Comment