Image default
বাংলাদেশ

বোতল কুড়িয়ে ডাস্টবিন বানিয়ে শহরে স্থাপন

ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। পচনশীল না হওয়ায় বছরের পর বছর জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবু বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। পানি, কোল্ড ড্রিংকসসহ নানা জিনিস ব্যবহারের পর বোতলগুলো যত্রতত্র ফেলা হয়। এতে অনেক সময় ঘটে দুর্ঘটনা। এসব প্লাস্টিকের বোতল কাজে লাগানোর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন নাটোরের প্রতিবন্ধী তরুণ মাহফুজুর রহমান। বিভিন্ন জায়গা থেকে ওসব বোতল কুড়িয়ে তৈরি করছেন ডাস্টবিন। সেসব ডাস্টবিন শহরে স্থাপন করেছেন তিনি।

মাহফুজুর রহমান নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ঠাকুর লক্ষ্মীকোল গ্রামের অটোরিকশাচালক সুজাদুর রহমানের ছেলে। ১৯৯৬ সালে তার জন্ম। ছয় মাস বয়সে হঠাৎ অসুস্থ হন। পরিবার তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ভুল চিকিৎসার কারণে মাহফুজুর রহমান এখন প্রতিবন্ধী। তার দুই পা অচল। তারপরও হাল ছাড়েননি। নাটোর টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।

যৌথ পরিবারের সদস্য মাহফুজের বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। এখন দাদা-দাদিসহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচ জন। বাবা অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালান। মাঝেমধ্যে অটোরিকশা চালিয়ে সংসারে সহযোগিতা করেন মাহফুজ।

মাহফুজুর রহমান বলেন, স্থানীয় দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য আমি। সংগঠনের মাধ্যমে জেনেছি, প্লাস্টিক বোতল অপচনশীল। পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। প্লাস্টিক সামগ্রী মাটির সঙ্গে মিশতে সময় লাগে অনেক বছর। এতে পরিবেশ এবং প্রকৃতি দূষণ হয়। পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবী আজ ধ্বংসের পথে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক প্রতি বছর সাগরে পতিত হওয়ায় ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে মাছের তুলনায় প্লাস্টিকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আরেক হিসাবে, বিশ্বজুড়ে প্রতি মিনিটে ৩৩ হাজার ৮০০টি বোতল এবং ব্যাগ সাগরে পড়ছে। বছরে যার পরিমাণ ৮০ লাখ টন, যা জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি।

সমুদ্রের ঢেউ এবং সূর্যের আলোর প্রভাবে প্লাস্টিকের পণ্য ধীরে ধীরে টুকরো হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। পানি ও অন্যান্য খাদ্যের সঙ্গে একসময় এই মাইক্রোপ্লাস্টিক বিভিন্ন জীবের দেহে প্রবেশ করে। একসময় ফুডচেইন বিশেষ করে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে। যা মানবদেহে চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটায়।

মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়গুলো জানার পর ভাবনায় পড়ে যাই। কীভাবে প্লাস্টিক সামগ্রী কাজে লাগিয়ে ক্ষতি হ্রাস করা যায় সেই চিন্তা করি। একপর্যায়ে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বোতল সংগ্রহ শুরু করি। ঠাকুর লক্ষ্মীকোলসহ নাটোর শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে এক মাসে ২৫০০ বোতল কুড়িয়ে তৈরি করি ২০টি ডাস্টবিন। এরপর ওগুলো ঠাকুর লক্ষ্মীকোলসহ নাটোরের বিভিন্ন বাজারে স্থাপন করি। 

মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, একটি ডাস্টবিন তৈরিতে ১২৫টি বোতলের প্রয়োজন হয়। এছাড়া বাঁশের খুঁটি ও বাতা লাগে। এগুলোর সমন্বয়ে দুদিনে তৈরি করি একটি ডাস্টবিন। সবার কাছে আমার অনুরোধ, ৩০ লাখ শহীদের রক্তেভেজা এই মাটি এবং পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখুন। ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল এবং ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।

 ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহফুজুর রহমান বলেন, ভবিষ্যতে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করতে চাই। প্রমাণ করতে চাই, কিছু করতে শারীরিক অক্ষমতা বাধা নয়।

ঠাকুর লক্ষ্মীকোল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিদুল ইসলাম বলেন, মাহফুজুর রহমান শারীরিক দুর্বলতাকে শক্তিতে পরিণত করে রাস্তায় ফেলা চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের প্যাকেট, পলিথিন, ছেঁড়া জুতা, ওষুধের খোসা পরিষ্কার করে প্রতিনিয়ত। তার অদম্য শক্তি আর কাজ দেখে সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত। দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব এবং ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত, তা দেখিয়েছে মাহফুজ। 

দিঘাপতিয়া এম কে অনার্স কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মাহফুজুর রহমান প্রতিবন্ধী হলেও সমাজ ও দেশের প্রতি তার ভালোবাসা অগাধ। তার মতো হাজারো মাহাফুজ আমাদের সমাজে তৈরি হলে দেশ সোনার বাংলায় পরিণত হবে।

 

Source link

Related posts

অনবরত ভাঙছে পদ্মার পাড়, প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেই

News Desk

‘স্মার্ট’ ব্যাটিংয়ের খোঁজে সিডন্স

News Desk

গোল্ডেন এ প্লাস পেলো যমজ ভাইবোন

News Desk

Leave a Comment