Image default
বাংলাদেশ

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই অপরিহার্য একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক একাউন্ট খোলা বেশ সহজ একটি কাজ। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট থাকলে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই আপনি একটি ব্যাংক একাউন্টের মালিক হতে পারেন। এই পোস্টটি পড়ে জানতে পারবেনঃ

ব্যাংক কি

ব্যাংক বলতে আমরা মুলত টাকা জমা রাখার একটি সংস্থাকে বুঝি। ক্ষেত্রবিশেষে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার ক্ষেত্রে মুনাফা ও পাওয়া যায়। তবে শুধুমাত্র টাকা জমা রাখলেই ব্যাংকের কাজ শেষ নয়।

কোনো ব্যক্তির সঞ্চয় বা প্রতিষ্ঠানের জমা রাখা অর্থকে আমানত হিসেবে সংগ্রহ করে ব্যাংকগুলো পুঁজি গড়ে তোলে। উক্ত পুঁজি উদ্যোক্তাদের মাঝে ঝণ প্রদান বা বিনিয়োগ করার মাধ্যমে ব্যাংক লাভ বা মুনাফা অর্জন করে থাকে।

ব্যাংক এর সুবিধা

অর্থ জমা রাখার পাশাপাশি ব্যাংকের আরো অনেক ধরণের সুবিধা রয়েছে। ব্যাংক এর উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধাসমুহ নিম্নরুপঃ

ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে পেমেন্ট প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে। এটিএম ও ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড এর বদৌলতে যেকোনো স্থানেই ব্যাংক দ্বারা অর্থ পরিশোধ অনেক সহজ হয়েছে।
হাতে টাকা রাখার ক্ষেত্রে চুরি যাওয়ার ভয় থাকলেও ব্যাংকে রাখা টাকা থাকে নিরাপদ।
সেভিংস একাউন্টে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ জমা রাখলে সঞ্চয়ের পাশাপাশি মুনাফাও পাওয়া সম্ভব।
ব্যাংক প্রদত্ত লোনের সঠিক ব্যবহার অনেক ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সমস্যার সহজ সমাধান।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কত প্রকার

সচরাচর চার ধরনের ব্যাংক একাউন্ট এর ব্যবহার আমরা দৈনন্দিন জীবনে দেখতে পাই। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রকারভেদসমুহ হলোঃ

কারেন্ট অ্যাকাউন্ট বা চলতি হিসাব

যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই ধরনের ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারে। মূলত সচরাচর অর্থ জমা রাখতে যেকোনো সময় উত্তোলন করতে এই ধরনের একাউন্ট ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের অ্যাকাউন্টের জন্য সাধারণত ব্যাংক থেকে সুদ দেওয়া হয়না, বরং বাৎসরিক ফি কাটা হয়। এই ধরনের একাউন্টের জন্য ব্যাংক থেকে পাওয়া যাবে ডেবিট কার্ড, গ্যারান্টি কার্ড, চেক বুক, এমনকি ওভারড্রাফট প্রভৃতি সুবিধা।

সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা সঞ্চয় হিসাব

নাম শুনেই এই ধরনের অ্যাকাউন্টের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সেভিংস অ্যাকাউন্ট মূলত টাকা জমা রাখতে ব্যবহার হয়। যেকোনো ব্যক্তি একক বা যৌথ সেভিংস একাউন্ট খুলতে পারে।

সেভিংস অ্যাকাউন্ট এর বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই বেতনভোগী কর্মচারী, পেনশন পাওনাকারী এবং শিক্ষার্থীরা। সেভিংস অ্যাকাউন্টের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এই অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট সময় টাকা জমা রাখলে ব্যাংক থেকে একটি নির্দিষ্ট অংকের মুনাফা প্রদান করা হয়। ব্যাংক কতৃক প্রদত্ত মুনাফার হার দৈনিক, সপ্তাহিক অথবা মাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে হতে পারে। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এই ধরনের অ্যাকাউন্টে স্বল্পমেয়াদী অর্থ জমা রেখে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।

রিকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট

নির্দিষ্ট সময়সীমার জন্য কিছু পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় এবং উচ্চ সুদের হার অর্জনের জন্য রিকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এই ধরণের অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতি মাসে জমা করতে হয়, যার বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময় পর সুদসহ মোট অর্থ প্রদান করা হয়। এই ধরনের অ্যাকাউন্টের মেয়াদ সাধারণত ছয় মাস থেকে দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট

ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট বা এফডি অ্যাকাউন্ট এ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে জমা করা হয়। সাধারণ শর্ত হচ্ছে জমা করা অর্থ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে প্রত্যাহার বা তোলা যাবে না। (তুললে মুনাফা কম পাবে অথবা পাবেনা)। প্রদেয় সুদের হার পরিমাণ, সময়সীমা, ইত্যাদি ব্যাংকভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার ফর্ম এর ধরন

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ফর্ম এর দরকার পড়ে, যা ব্যাংকসমুহ সরবরাহ করে। ব্যবহার এর উপর ভিত্তি করে ব্যাংক একাউন্ট এর ফর্মকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

ব্যক্তিগত একাউন্ট ফর্মঃ ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তৈরি করা একাউন্ট তৈরি করতে ব্যক্তিগত একাউন্ট ফর্ম লাগে। এই ধরনের ফর্ম ব্যবহার করে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায়।
প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট ফর্মঃ ব্যক্তিগত একাউন্টের বাইরে প্রতিষ্ঠান এর নামে ব্যাংক হিসাব খুলতে প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট ফর্ম ব্যবহার করতে হয়।
আরো জানুনঃ নগদ একাউন্ট খোলার সহজ উপায়

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে

ব্যাংক হিসাব বা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে গেলে কিছু কাগজপত্র দরকার হয়। ব্যাংক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে এসব কাগজপত্র থাকা অত্যাবশ্যক। উল্লেখ্য যে ব্যাংকভেদে উল্লিখিত কাগজপত্রের ক্ষেত্রে তারতম্য দেখা যেতে পারে।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে সাধারণত যা লাগেঃ

** ব্যাংক প্রদত্ত অ্যাকাউন্ট ফরম
** সাম্প্রতিক সময়ে তোলা একাউন্ট হোল্ডারের দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রংগিন ছবি (সত্যায়িত দরকার হতে পারে)
** সাম্প্রতিক সময়ে তোলা নমিনির পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি
** অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ও নমিনি, উভয়ের ছবিযুক্ত পরিচয় পত্র, যেমনঃ জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স, যেকোনো একটির অনুলিপি

জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহার করেও ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায়। তবে সেক্ষেত্রে হিসাব পরিচালনাকারীর ছবিযুক্ত অন্য যেকোনো গ্রহণযোগ্য পরিচিতিপত্র প্রদান করতে হতে পারে।

একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক চলতি হিসাব খুলতে গেলে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স ও প্রতিষ্ঠানের সিল লাগে। ব্যবসার ধরন ও প্রকৃতি অনুসারে কাগজপত্রের চাহিদা বাড়তেও পারে।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে গেলে নিম্নে বর্ণিত দরকারী বিষয় সম্পর্কে জানা উচিতঃ

ফরমঃ ব্যাংক প্রদত্ত একাউন্ট ফরমটি সংগ্রহ করে যথাযথ তথ্য দিয়ে ফরমটি পূরণ করুন।
স্পেসিমেন সিগনেচার কার্ডঃ ব্যাংক অফিসারের সামনে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের স্বাক্ষর করতে হয়, যা স্পেসিমেন সিগনেচার কার্ড নামে পরিচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই কার্ড একাউন্ট খোলার ফরমের সাথেই দিয়ে দেওয়া হয়।
পরিচয়দানকারীঃ যিনি ব্যাংক একাউন্ট খুলছেন, তার পরিচয় নিশ্চিতকরণে একজন পরিচয়দানকারীর প্রয়োজন হয়। একাউন্ট খোলার সময় পরিচয়দানকারী স্বশরীরে উপস্থিত না হলেও চলে। তবে পরিচয়দানকারী থাকার বাধ্যবাধকতা এখন আর নেই।
নমিনিঃ একাউন্ট যিনি খুলছেন, তার অবর্তমানে একাউন্টের মালিককে বলা হচ্ছে নমিনি।
উল্লিখিত কাগজপত্র ও তথ্য একত্র করে যে ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চান, সে ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি প্রথমে একবার ব্যাংকের হেল্পলাইনে কল করে কথা বলে নিতে পারেন। এতে দরকারি ডকুমেন্ট জোগাড় করা সহজ হবে। আপনার প্রদত্ত তথ্য ও কাগজপত্র যথাযথ হলে অল্পসময়ের মধ্যেই ব্যাংকে আপনার একাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।

অনলাইনে যেসব ব্যাংকের একাউন্ট খোলা যায়

তো ভিউয়াস, আপনাদের সুবিধার্তে কিছু কিছু ব্যাংক অনলাইনে একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়াটি চালু করছে। এখন আর স্ব-শরীরে ব্যাংকে উপস্থিত না থেকে ঘরে বসে আপনার হাতে থাকা স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকের একাউন্ট ক্রিয়েট করতে পারবেন।

যেসব ব্যাংকে অনলাইনে ক্রিয়েট করতে পারবেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-

১. ডাচ বাংলা ব্যাংকঃ গুগল প্ল-স্টোর থেকে ‘Nexus Pay’ অ্যাপস ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন। আর আপনি নিজে নিজে ক্রিয়েট করুন ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট।
২. ন্যাশনাল ব্যাংকঃ গুগল প্লে-স্টোর থেকে NBL iPower অ্যাপস ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন। আর আপনি নিজে ক্রিয়েট করুন ন্যাশনাল ব্যাংক।
৩. সিটি ব্যাংকঃ Ekhoni App থেকে সিটি ব্যাংকের একাউন্ট ক্রিয়েট করা যায়।
৪. ইসলামি ব্যাংকঃ CellFin App থেকে ইসলামি ব্যাংকের একাউন্ট ক্রিয়েট করা যায়।
৫. সোনালি ব্যাংকঃ Sonali eSheba App থেকে সোনালি ব্যাংকের একাউন্ট ক্রিয়েট করা যায়।
৬. ইউসিবিঃ UClick App ব্যাবহার করে ইউসিবি ব্যাংকের একাউন্ট ক্রিয়েট করা যায়।

উল্লেখ্যিত ব্যাংক ছাড়াও আরো ব্যাংক রয়েছে যা অনলাইনের মাধ্যমে ক্রিয়েট করা যায়।

 

 

 

 

 

 

Related posts

ইট-মাটি দিয়ে ফ্লোর ঢালাই, ঠিকাদার বললেন ‘এর চেয়ে ভালো কাজ সম্ভব নয়’

News Desk

পাহাড়ের এক উপজেলায় ৯ হাজার মানুষ পানিবন্দি, রান্না করে খাবার দিচ্ছে বিএনপি

News Desk

নওগাঁয় কেটে ফেলা হয়েছে বাগানের শত শত আম গাছ

News Desk

Leave a Comment