Image default
বাংলাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্পনগরীতে জলাবদ্ধতা, কোটি টাকার ক্ষতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চারলেন মহাসড়কের নির্মাণ কাজের জন্য ভরাট করে ফেলা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্পনগরী সংলগ্ন ছোট-ছোট একাধিক খাল। এতে করে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে শিল্পনগরীতে। কারখানার ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় গত তিন দিন ধরে অন্তত ৪০টি কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

এতে করে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের অন্তত ১ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। সব মিলিয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে বিসিক শিল্পনগরীর কার্যক্রম। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা গেলে বন্ধ হয়ে যাবে শিল্প নগরীর সকল কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) অধীনে ১৯৯৭-৯৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নন্দনপুর এলাকায় গড়ে ওঠে শিল্পনগরী। ২১.৯৮ একর আয়তনের এ শিল্পনগরীতে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘এস’ ক্যাটাগরির ১৩৮টি প্লট রয়েছে। সবগুলোই বরাদ্দ দেওয়া আছে ব্যবসায়ীদের।

শিল্পনগরীতে বর্তমানে ৬০টি কারখানা চালু রয়েছে। এর মধ্যে ১টি ওষুধ কারখানা, ১৭টি মেটাল কারখানা, ৮টি ফ্লাওয়ার মিল, ৩টি সাবান, ৩টি সোডিয়াম সিলিকেট, ৫টি বেকারি ও ১টি তারকাঁটাসহ বিভিন্ন পণ্যের কারখানা আছে। এসব কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এ উন্নয়ন কাজের জন্য মহাসড়ক সংলগ্ন ছোট ছোট একাধিক খাল বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলে সওজ কর্তৃপক্ষ। এতে করে অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। গত ৭-৮ দিন আগে বিসিক শিল্পনগরী সংলগ্ন খালগুলোও ভরাট করা হয়। এতে করে শিল্পনগরীর ভেতরের সড়কগুলোতে হাঁটুপানি জমেছে। জলাবদ্ধতার কারণে কারখানাগুলোর ভেতরেও পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে অন্তত ৪০টি কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

রোববার (২৪ এপ্রিল) সরেজমিন বিসিক শিল্পনগরীতে গিয়ে দেখা যায়, শিল্পনগরী সংলগ্ন খালগুলো পুরোপুরি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এতে করে শিল্পনগরীর কার্যালয়ের সামনে হাঁটুপানি জমেছে। কারখানার সামনের সড়কগুলোতে পানি জমার কারণে ক্রেতারা আসতে পারছেন না। ঈদের আগে কারখানা বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কারখানা মালিক ও শ্রমিকরা।

মুন্নী সুপ ফ্যাক্টরির শ্রমিক মো. আক্তার জানান, গত কয়েকদিন ধরে কারখানার সামনে হাঁটুপানি জমে আছে। এই পানি কারখানার ভেতরেও ঢুকে পড়েছে। এতে করে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ঈদের আগমুহূর্তে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।

জাবেদ মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের সহকারী ব্যবস্থাপক হাফিজ উদ্দিন জানান, তাদের কারখানার ভেতরে পানি না ঢুকলেও সামনে পানি টইটম্বুর করছে। মালামাল নেওয়ার জন্য বাইরে থেকে ক্রেতারা কারখানায় আসতে পারছেন না। ফলে কারখানার উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ উৎপাদিত পণ্য ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় আছেন বলে জানান তিনি।

নিউ মামুনি সোপ ফ্যাক্টরির মালিক মো. আক্তার হোসেন বলেন, আমার কারখানার ভেতরে এবং বাইরে হাঁটুপানি জমেছে। কারখানার ভেতরের সব কিছু এখন পানির নিচে। বাধ্য হয়ে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে পানিতে আমার ১০ লাখ টাকার সাবান নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিদিন অন্তত ১ লাখ টাকার সাবান উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সবমিলিয়ে লোকসান দাঁড়াবে ২০-২৫ লাখ টাকা।

ম্যাড্রেক্স লাইফ সায়েন্স লিমিটেডের প্ল্যান্ট ব্যবস্থাপক রাজীব কুমার দাস জানান, জলাবদ্ধতার কারণে কারখানার চারপাশে এবং ভেতরে পানি জমেছে। ফলে গত ৩ দিন ধরে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন অন্তত ১০ লাখ টাকার ওষুধ উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .

বিসিক শিল্পনগরীর ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না রেখেই খালগুলো ভরাট করা হয়েছে। পানি না সরার কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে করে অধিকাংশ কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন অন্তত ১ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিসিকের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রোকন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আমাদের প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে চারলেন প্রকল্পের পরিচালককে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল- যেন পনি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে খালগুলো ভরাট করা হয়। কিন্তু গত ৬-৭ দিন আগে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না রেখেই খালগুলো পুরোপুরি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এতে করে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় অধিকাংশ কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি, দ্রুত যেন এ সমস্যাটি সমাধান করা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পংকজ ভৌমিক বলেন, বিসিকের কোনো জায়গা আমরা ভরাট করিনি। বিসিক এতোদিন সড়ক ও জনপথের জায়গায় বর্জ্য ফেলেছে। জায়গাটি (খাল) সড়ক ও জনপথের। চারলেনের সড়কের কারণে এখন জায়গাটি প্রয়োজন হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই।

Related posts

ভারতীয় গরু নিয়ে যত চিন্তা

News Desk

হাসপাতালে রোগীদের দেখতে গিয়ে সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিতের কথা বললেন এমপি কামাল

News Desk

পটুয়াখালীতে ১১ মামলার আসামীসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

News Desk

Leave a Comment