ব্রিজ হওয়ার কথা অন্য জায়গায়, হচ্ছে চেয়ারম্যানের বাড়ির দরজায়
বাংলাদেশ

ব্রিজ হওয়ার কথা অন্য জায়গায়, হচ্ছে চেয়ারম্যানের বাড়ির দরজায়

বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুই এলাকায় দুটি ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু অনুমোদিত দুই এলাকায় ব্রিজ না করে তা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি ব্রিজ রুমা উপ‌জেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমার বা‌ড়ি যাওয়ার প‌থে সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ঘা‌ট এলাকায় তৈরি করা হচ্ছে। অপরটি তৈরি করা হচ্ছে রুমা বাজা‌রের ইডেনপাড়ায়। ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহারের জন্য এসব ব্রিজ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুমা সদর ইউনিয়নের বে‌থেলপাড়া থেকে পাইন্দু ইউনিয়নের প‌লিপাড়া যাওয়ার প‌থে মাপাই ঝি‌রি এলাকায় একটি ও বগালেক রাস্তার মাথা থে‌কে বরশিপাড়া যাওয়ার প‌থে বামরং ঝি‌রিতে আরেকটি ব্রিজ হওয়ার কথা ছিল। ইতোম‌ধ্যে টেন্ডার হ‌য়ে‌ গেছে। কিন্তু টেন্ডা‌রের পরই নানা অজুহা‌তে ব্রিজ দু‌টি নি‌র্দিষ্ট এলাকায় না ক‌রে পছ‌ন্দের জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও ঠিকাদার। কয়েকদিন আগে উপ‌জেলা চেয়ারম্যানের বা‌ড়ির দরজায় সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ঘা‌ট এলাকায় একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু ক‌রে‌ছেন ঠিকাদার। আরেক‌টি তৈরি হচ্ছে রুমা বাজা‌রের ইডেনপাড়া সড়‌কে। ব্রিজ দু‌টি নি‌র্দিষ্ট স্থা‌নে না ক‌রে পছ‌ন্দের জায়গায় সরিয়ে নেওয়ায় পিআইও ও ঠিকাদা‌রের সমালোচনা করছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ৯১ লাখ ৯৫ হাজার ৮৬৫ টাকা ব্যয়ে ১৫‌ মিটা‌র ও  ৮৭ লাখ ৯৫ হাজার ৩০৩ টাকা ব্যয়ে ১২‌ মিটার ব্রিজ নির্মাণের কাজ পান এমএম হাসান কনস্ট্রাকশনের ঠিকাদার মো. ইউসুফ। প‌রে ঠিকাদারের কাছ থে‌কে দুটি ব্রিজের কাজ কি‌নে নেন সাব-ঠিকাদার মুরাদ হোসেন।

স‌রেজ‌মি‌নে দেখা গেছে, রুমা উপ‌জেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমার বা‌ড়ি যাওয়ার প‌থে ১ নম্বর ঘা‌টে সং‌শ্লিষ্ট মন্ত্রণাল‌য়ের স্থানান্ত‌রের অনু‌মোদন ছাড়াই ১৫‌ মিটা‌রের ব্রিজের কাজ শুরু হ‌য়ে‌ছে। কা‌জের জন্য আনা হ‌য়ে‌ছে নিম্নমানের সামগ্রী। স্থানীয় ঝি‌রি থে‌কে উত্তো‌লিত পাথর, পুরোনো ইট ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে।

প‌লিপাড়া ও বরশিপাড়ার বাসিন্দারা বলছেন, যেসব স্থানের জন্য টেন্ডার হ‌য়ে‌ছে সেখা‌নে ব্রিজের খুব প্রয়োজন। অথচ জনবহুল এলাকা না হওয়ার অজুহা‌তে ব্রিজ দু‌টি স‌রি‌য়ে নেওয়া হয়েছে অন্যত্র। শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থে কৌশ‌লে তা সরিয়ে নিয়েছেন পিআইও ও ঠিকাদা‌র। দায়িত্বশীলদের তদার‌কি না থাকায় এমন কাজ করেছেন তারা। দুটি ব্রিজ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত স্থানে করার দাবি জানাই আমরা।

বরশিপাড়ার ভারপ্রাপ্ত পাড়াপ্রধান উথোয়াই মং মারমা ব‌লেন, ‘এই পাড়ায় ১৮ প‌রিবারের বসবাস। পাড়ায় আসার জন্য আমাদের এক‌টি ব্রিজ খুব দরকার। আবেদন নি‌য়ে দীর্ঘদিন অ‌ফি‌সে অ‌ফি‌সে ঘু‌রে‌ছি। অথচ ব্রিজের অনু‌মোদ‌নের ব্যাপা‌রে আমা‌দের কিছুই জানা‌নো হয়‌নি। এখন শুনছি, আমাদের পাড়ার জন্য প্রস্তাবিত ব্রিজ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এজন্য আমরা পাড়াবাসী মানববন্ধন কর‌বো, প্রয়োজনে রাস্তায় বিক্ষোভ করবো।’

ঠিকাদার মো. ইউসুফ ব‌লেন, ‌‘টেন্ডা‌রের মাধ্যমে কাজ‌ পে‌য়ে পরে তা ঠিকাদার মুরাদকে করতে দি‌য়ে‌ছি। পিআইও যেখানে ব্রিজ করতে বলেছেন, সেখানেই করা হচ্ছে। তারাই ব্রিজগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। এখানে আমাদের কোনও দোষ নেই। তাদের কথার বাইরে কাজ করার সু‌যোগ নেই। পরে বিল দেবে না।’

সাব-ঠিকাদার মুরাদ হোসেন ব‌লেন, ‘যে টাকায় টেন্ডার হয়েছে, তার চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি দিয়ে দুটি ব্রিজের কাজ কিনে নিয়েছি আমি। পিআইও যেসব স্থানে ব্রিজ করতে বলেছেন, সেখানেই করছি।’ 

নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে টাকা বরাদ্দ পেয়েছি তার মধ্যেই কাজ করার চেষ্টা করছি। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করবো না।’

নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহ‌রিয়ার মাহমুদ রঞ্জু ব‌লেন, ‘ব্রিজ নির্মা‌ণে কোনও ধর‌নের নিম্নমা‌নের সামগ্রী ব্যবহার করতে দেওয়া হ‌বে না।’

ব্রিজ দুটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে তি‌নি ব‌লেন, ‘যেখা‌নে হওয়ার কথা ছিল, সে‌খানে কোনও পাড়া কিংবা জনবহুল এলাকা‌ না থাকায় অন্যত্র করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি ইডেনপাড়ায় যাওয়ার প‌থে ও অন্যটি রুমা উপ‌জেলা চেয়ারম্যানের বা‌ড়ি যাওয়ার প‌থে। ‌নিয়ম অনুযায়ী, ক‌মি‌টির সিদ্ধা‌ন্ত মোতাবেক নতুন দুটি জায়গায় ব্রিজের কাজ‌ শুরু হ‌য়ে‌ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বিষয়‌টি জানানো হ‌য়ে‌ছে।’ 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ওসব স্থানে ব্রিজ করার অনুমতি দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে পিআইও বলেন, ‘মন্ত্রণাল‌য়ের অনু‌মোদ‌নের কাগজপত্র এখনও আমাদের হাতে আসেনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহবুবুল হক ব‌লেন, ‘ক‌মি‌টির ক‌য়েকজন মি‌লে সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছেন। বন্যা পরবর্তী‌তে যেখা‌নে বে‌শি প্রয়োজন, সেখা‌নেই ব্রিজ দু‌টি স‌রি‌য়ে নেওয়া হ‌য়ে‌ছে। বিষয়‌টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে জানানো হ‌য়ে‌ছে।’

Source link

Related posts

আগামী বাজেটে যেসব বিষয় দেখা উচিত

News Desk

সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ ৬ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে

News Desk

সংবাদ প্রকাশের পর অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু

News Desk

Leave a Comment