গাজীপুরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন কারখানায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ এবং এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭/৮শ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়েছে। মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায় এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক কারখানার নিরাপত্তাকর্মী গোলজার হোসেন বাদী হয়ে গত ৩১ অক্টোবর দিবাগত রাতে কোনাবাড়ী থানায় মামলাটি করেন। এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আশরাফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিহত পোশাকশ্রমিক এমরান হোসেন (৩২) কুমিল্লার কসবা উপজেলার টুমবাড়িয়া গ্রামের জহুরুল হকের ছেলে। তিনি ওই কারখানার আশপাশে ভাড়া বাসায় থেকে এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় কাজ করতেন।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার রিফাত (১৯), কোনাবাড়ী (কুদ্দুছ নগর) পুকুরপাড় এলাকার নূর হোসেন (১৮), মহিদুল ইসলাম (২০), আমবাগ এলাকার খোবায়েত (২০), শান্ত তালুকদার (২১), আমবাগ (পূর্বপাড়া) এলাকার রহিম বাদশা (২২), ভাড়াটে শের আলী (১৯), বাইমাইল এলাকার ইয়াসিন (১৯) এবং হরিনাচালা (সেলিম নগর) এলাকার তোফায়েল (২২)।
বুধবার (১ নভেম্বর) বিকালে তাদেরকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে তাদের ৩ দিনের রিমান্ড মুঞ্জুর করেন।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিন যাবৎ বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলন চলাকালীন সোমবার (৩০ অক্টোবর) কোনাবাড়ী এলাকায় অনন্ত গ্রুপের এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক কারখানা নিরাপত্তার কারণে দুপুরের পর ছুটি ঘোষণা করে। ওই দিন বিকালে আন্দোলনের সময় কোনাবাড়ী ও এর আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। গ্রেফতার ৯ জনসহ শ্রমিক নামধারী অজ্ঞাত বহিরাগত দুষ্কৃতকারী ৭০০ থেকে ৮০০ জন লোক রড, হাতুড়ি, লোহার পাইপ, কাঠের বাটাম, শাবল ও বাঁশের লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কারখানায় হামলা করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানার প্রধান ফটক, সীমানাপ্রাচীর ভেঙে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এ সময় নিরাপত্তাকর্মী ও অন্য কর্মচারীরা কারখানার সম্পদ রক্ষার্থে হামলাকারীদের বাধা দিলে তাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে বেশ কয়েকজন আহত হন।
পরে তারা কারখানায় প্রবেশ করে কারখানার নিচতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লোরের অফিসকক্ষ, বিভিন্ন মেশিনারিজ, গুরুত্বপূর্ণ গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ, ফ্যাব্রিকস, তৈরি পোশাক, ফেয়ার প্রাইস শপ, জেনারেটর, কমপ্রেসার, এসি ভাঙচুরসহ ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। উত্তেজিত শ্রমিকরা পেট্রোল ঢেলে কারখানার নিচতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত অফিস, ফ্লোর, ফ্যাব্রিকস গোডাউন, কাটিং এবং সুইং সেকশনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, সোমবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক কারখানার গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করে। পরে ওই রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ডাম্পিং করার সময় কারখানার ভেতর থেকে দগ্ধ এক শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে নিহতের স্বজনরা শ্রমিকের পরিচয় শনাক্ত করেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ হোসেন জানান, ঘটনার সময় ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অনেক আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে কোনাবাড়ীর এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক কারখানায় প্রথমে ভাঙচুর ও পরে আগুন দেয় আন্দোলনরত উত্তেজিত শ্রমিকরা।