ভাঙনে দিশেহারা তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা, অন্যত্র বসবাসের সাধ্য নেই অনেকের
বাংলাদেশ

ভাঙনে দিশেহারা তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা, অন্যত্র বসবাসের সাধ্য নেই অনেকের

‘তিস্তা হামার ছয় চাষ (চরম ক্ষতি) করবার লাগছে। ভাঙতে আছে, ভাঙতে আছে। কাদো হয় (মাটি নরম হয়) আর ভাঙে। বাড়িঘর-আবাদি জমি কিছুই থুবার লাগছে না। নদীপাড়ের সবার মন খারাপ।’ কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় তিস্তার তীব্র ভাঙনে ভিটে হারানোর আশঙ্কায় থাকা স্থানীয় বাসিন্দা কৃষক মিলন এভাবেই নিজেদের দুরবস্থার বর্ণনা করছিলেন। উজানের ঢলে পানি বাড়ার সঙ্গে তিস্তার আগ্রাসী ভাঙনে বসতভিটা হারাচ্ছেন তীরবর্তী বাসিন্দারা।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকালে কথা হলে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের এই বাসিন্দা জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের চতুরা মৌজার কালিরহাট বাজার, সোনার জুম্মা ও মৌলভীপাড়া এলাকায় তিস্তার ভাঙন চলছে। মানুষ বাড়িঘর সরিয়ে নিলেও রক্ষা পাচ্ছে না। নদী ভাঙতে ভাঙতে তার নিজের বাড়ির কাছের চলে এসেছে। এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দা কৃষক ও দিনমজুর। স্থানান্তরিত হয়ে অন্যত্র বসতি স্থাপন করার সাধ্য নেই অনেকের। ভাঙন প্রতিরোধ করা না হলে শতাধিক পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা এখন পানিতে টইটম্বুর। উজান থেকে নেমে আসা ঘোলা পানির তীব্র স্রোত সময়ে সময়ে আছড়ে পড়ছে তীরে। গ্রাস করছে একের পর এক আবাদি জমি আর বসতভিটা। পরিবার নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু রক্ষা করতে খুলে নেওয়া উপকরণ নিয়ে ছোটাছুটি করছে ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো।

ভাঙনের কিনারে দাঁড়িয়ে আছেন কৃষক হাফিজার রহমান ও মুদিদোকানি তাজুল ইসলাম। তিস্তার ভাঙনের তীব্রতার কথা উল্লেখ করে তারা জানান, প্রতিদিন একটু একটু করে ভাঙছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর তীব্র ভাঙনে চারটি পরিবার বসতি সরিয়ে নিয়েছে। তাদের নিজেদের আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। এখন বসতভিটা হুমকিতে।

তাজুল বলেন, ‘চার বছর আগে আমার কয়েক একর জমি বিলীন হয়েছে। তিন দিন আগে আবার বসতভিটার কাছের পাটক্ষেতসহ ৪০ শতক জমি তিস্তার গর্ভে চলে গেছে। নদী এখন বাড়ির কাছে চলে আসছে। আমরা ভয়াবহ অবস্থায় আছি। ভালো করে কথা বলতেও পারি না। একদিকে দোকান, অন্যদিকে বাড়ি। কিছুই বুঝি রক্ষা করা যাচ্ছে না।’ তীরবর্তী মানুষের সম্পদ রক্ষায় সরকারের কাছে দ্রুততম সময়ে জিও ব্যাগ ফেলার অনুরোধ জানান এই বাসিন্দা।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলার অনুরোধ বাসিন্দাদের

জিও ব্যাগ ফেলার আকুতি জানিয়ে কৃষক হাফিজার বলেন, ‘এক এক করি তিনবার বাড়ি ভাঙছি। আর কত সহ্য করি। কিছু জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করলে উপকার হইল হয়। তা ছাড়া বাঁচার উপায় দেখি না।’

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সেফারুল ইসলাম জানান, তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে একের পর এক পরিবার বসতি সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সোনার জুম্মা এলাকা থেকে মৌলভীপাড়া পর্যন্ত তীরবর্তী শতাধিক পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। তারা নিজ চোখে পরিস্থিতি দেখে গেছেন। ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পাউবোর কর্মকর্তাদের

জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার বলেন, ‘ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন চলছে। ভিডিও কলের মাধ্যমে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে (জাহিদ ফারুক) ভাঙন পরিস্থিতি দেখানো হয়েছে। তিনি জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ শুরুর অনুমতি দিয়েছেন। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা নেবে।’

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘তিস্তায় ভাঙন চলছে। বিদ্যানন্দের কালিরহাট বাজারের ভাটির দিকে ভাঙনের তীব্রতা বেশি। মন্ত্রী মহোদয়কে বিষয়টি জানানোর পর প্রতিরক্ষা কাজের অনুমতি পাওয়া গেছে। আমরা আপাতত ২০০ মিটার স্থান জুড়ে জিও ব্যাগ ফেলবো। দু-একদিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’

তবে কতটি পরিবারের বাস্তুভিটা তিস্তার গর্ভে বিলীন হওয়ার পর পাউবো ‘জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ’ শুরু করবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

Source link

Related posts

পদ্মা সেতুতে গাড়ি থামিয়ে সেলফি তোলায় জরিমানা

News Desk

ঈদ যাত্রায় ফেরি ও লঞ্চঘাটে দুর্ভোগের শঙ্কা

News Desk

সরকারের পতন না ঘটানো পর্যন্ত রাজপথে থাকবো: মির্জা ফখরুল

News Desk

Leave a Comment