ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কোনও উদ্যোগই যেন কাজে আসছে না। বরং দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের হার আগের সব বছরের তুলনায় বেশি।
এদিকে, ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তারে সিটি করপোরেশনের অবহেলা তথা পর্যাপ্ত ওষুধ না ছিটানোকেই ধুষছেন নগরবাসী। আর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মশা নিধনে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ক্রাশ প্রোগ্রাম পালন করা হচ্ছে। গত ২২ জুন থেকে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম চলমান আছে। পাশাপাশি ৬০টি আবাসিক এলাকায় এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ও লার্ভা শনাক্তে ড্রোন ব্যবহার করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, বাসা-বাড়ি ও অফিস-আদালতের ছাদ বাগান এবং অন্যান্য উৎসে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা খুঁজতে এ ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘ডিজেআই ম্যাভিক এয়ার এস২’ মডেলের এ ড্রোনের ওজন ৫৯৫ গ্রাম। ড্রোনে আছে ৪৮ মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা। মাটি থেকে ১০০ মিটার উঁচুতে উঠে ড্রেনের সাহায্যে ছবি বা ভিডিও করা যাচ্ছে। ড্রোনটির জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে প্রতি দিন পাঁচ হাজার টাকা করে ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ড্রোন পরিচালনার জন্য সাগর দত্ত নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে চসিক।
চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রমে গতি বেড়েছে। মশা নিধন কার্যক্রমে নতুন করে ১৮০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে এখন জনবলের সংখ্যা ৪০০ জন। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম চলমান আছে। পাশাপাশি প্রতিদিন ১০ ওয়ার্ডে ১০টি টিম স্প্রে করার কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু মশার প্রজননস্থল শনাক্তে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নগরীর ৬০টি আবাসিক এলাকায় যেমন বাসা-বাড়ির ছাদে পানি জমে আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। আগে যেখানে প্রতিটি বাড়ি তল্লাশি করে দেখতে হতো। এখন সেখানে ড্রোনের মাধ্যমে তা দেখা অনেক সহজ হচ্ছে। এর সাহায্যে ৮-১০ ঘণ্টার কাজ এক ঘণ্টায় করা যাচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ যতদিন কমবে না ততদিন পর্যন্ত এর সাহায্য নেওয়া হবে।’
নগরীর মুরাদপুর আতুরার ডিপো এলাকার বাসিন্দা মজুমদার নাজিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় টেকা দায় হয়ে পড়েছে। বিকাল না গড়াতেই মশার উৎপাত বাড়ে। কয়েল জ্বালিয়েও মশা তাড়ানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে দেখা মিলছে না চসিকের মশা নিধনে জড়িত স্প্রে-ম্যানদের। এ এলাকায় গত এক বছরে একবারও তাদের দেখা যায়নি। সিটি করপোরেশনের নাম মাত্র কর্মসূচির কারণেই নগরীতে মশা বেড়েছে।’
একই অভিযোগ নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের। তার দাবি, ‘চসিকের মশা নিধনে জড়িত স্প্রে-ম্যানদের এলাকায় ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না। ওষুধ না ছিটানোর কারণে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা।’
নগরীর বহদ্দারহাট সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো. হানিফ বলেন, ‘এ এলাকায় মাঝেমধ্যে চসিকের স্প্রে-ম্যানদের দেখা যায়। ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। কেননা যে হারে ডেঙ্গু বেড়েছে সেভাবে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলার ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। বেড়েছে রোগী ও মৃত্যু। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এডিস মশা নিধন করতে হবে। মশা নিধনের কাজ করে সিটি করপোরেশন। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনকে সিটির মাধ্যমে মশা নিধনে জোর দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন করে আরও ১১১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে সর্বমোট ৮৫৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৩ জন।’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে জুলাইয়ে ২৯৫ আক্রান্ত ও মারা গেছেন চার জন। জুনে ২৮২ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৬, মে-তে আক্রান্ত ৫৩, এপ্রিলে আক্রান্ত ১৮, মার্চে আক্রান্ত ১২, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ২২ ও জানুয়ারিতে ৭৭ জন আক্রান্ত ও একজন মারা গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৪১২, নারী ২৫২ ও শিশু ১৯৫ জন।’