সিলেটে ১০ দিনের মধ্যে এত বার ভূম্পিকম্প এবারই প্রথম। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে অনেক দূরে শুধু সিলেট নগরে কেন ভূকম্পন হচ্ছে, সে হিসাব মেলাতে পারছে না কেউ। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন নগরীর বাসিন্দারা। বিশেষ করে অপরিকল্পিত ও পুরোনো স্থাপনা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই সিটি কর্পোরেশনের। সোমবার সন্ধ্যায় আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ভূমিকম্পে নগরীর রাজা জিসি হাইস্কুলের একটি ভবন ফেটে গেছে। এ অবস্থায় ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় নগরীর সব ভবনের ঝুঁকি মূল্যায়ন জরিপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, চলতি সপ্তাহে ঝুঁকি মূল্যায়ন জরিপের কার্যক্রম শুরু হবে। গত ২৯ মে থেকে কয়েক দফা ভূমিকম্পের ঘটনায় সিটি কর্পোরেশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ২৯ মে সকালে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে সাতবার এবং পরদিন ভোর সাড়ে ৪টায় আরেকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সবগুলো ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের আশপাশের এলাকা। নগরের আশপাশের এলাকার বাইরে কেউ ভূমিকম্প টের পাচ্ছে না।
সিলেটে ১০ দিনের মধ্যে ১০ দফা ভূমিকম্পের পর নড়েচড়ে বসেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মার্কেট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আজ বুধবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে তারা। বৈঠকে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন দ্রুত পরীক্ষা করার বিষয়ে আলোচনা হবে। এটিকে অনেকে স্বাভাবিক বললেও বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, সিলেট নগরের নিচে কোনো ফল্ট লাইন নতুন করে তৈরি হয়েছে কি-না সেটি জরিপ করে দেখা দরকার। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা প্রস্তুতির ওপর।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যা-লয়ের (শাবিপ্রবি) পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিইই) বিভাগের শিক্ষার্থীদের দিয়ে এ জরিপ করা হবে। বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, আশা করছি, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে জরিপের কার্যক্রম শেষ করা যাবে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদ বলেন, ভূমিকম্প হবেই, এটা আমরা প্রতিরোধ করতে পারব না। তবে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। শহরের মাটির নিচে নতুন কোনো ফল্ট লাইন সৃষ্টির বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
সিলেট নগরীতে বর্তমানে দেড় লাখ বাসাবাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত বাড়ির সংখ্যা মাত্র ৫২ হাজার। বাকি বাড়িগুলো অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হয়। নগরীর ২৪টি ভবনকে আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল সিটি করপোরেশন। এছাড়া ৪০টি ভবনের ঝুঁকি মূল্যায়ন করে প্রাথমিকভাবে মানসম্পন্ন পাওয়া গেছে।