ভেসে গেছে আট হাজার পুকুরের মাছ, ২০ কোটি টাকার ক্ষতি
বাংলাদেশ

ভেসে গেছে আট হাজার পুকুরের মাছ, ২০ কোটি টাকার ক্ষতি

উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় সিলেটের সাত উপজেলার অন্তত আট হাজার ৪৯৪ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ২০ কোটি ৬১ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কানাইঘাট উপজেলার তিন হাজার ৩০০টি পুকুর ও ঘের।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ মে থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সাত উপজেলার পুকুরগুলো তলিয়ে যায়। এতে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জের ৬১ ইউনিয়নের আট হাজার ৪৯৪টি পুকুর, দিঘী ও ঘেরের মাছ এবং পোনা ভেসে গেছে। সেইসঙ্গে চাষের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি ৬১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া এসব উপজেলায় স্লুইসগেট ও ব্রিজ ভেঙে ৯৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা

জৈন্তাপুরের তিন, গোয়াইনঘাটের ১৩, কোম্পানীগঞ্জের ছয়, জকিগঞ্জের ছয়, কানাইঘাটের নয়, ওসমানীনগরের আট ও বালাগঞ্জের ছয় ইউনিয়নের চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জৈন্তাপুরের দুই হাজার ৭৫, গোয়াইনঘাটের দুই হাজার ১০০, কোম্পানীগঞ্জের ২৯, জকিগঞ্জের ৭৫০, কানাইঘাটের তিন হাজার ৩০০, ওসমানীনগরের ৪০ এবং বালাগঞ্জের ৬০০টি পুকুর, দিঘী ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জৈন্তাপুরে ক্ষতির পরিমাণ

জৈন্তাপুরে ভেসে গেছে বড় প্রজাতির ২৪ মেট্রিক টন মাছ ও ২১ লাখ ৬০ হাজার পোনা। বড় মাছে ক্ষতি সাত লাখ ২০ হাজার ও পোনায় এক কোটি আট লাখ ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া পুকুর, ঘের ও স্লুইসগেটসহ অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৩৫ লাখ টাকার। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দুই কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

গোয়াইনঘাট

গোয়াইনঘাটে ভেসে গেছে ৩৫০ মেট্রিক টন বড় প্রজাতির মাছ ও ২২ লাখ পোনা। বড় মাছে ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি ৯৮ লাখ ও পোনায় ২২ লাখ টাকা। এছাড়া অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে উপজেলার চাষিদের ক্ষতি হয়েছে সাত কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

কোম্পানীগঞ্জ

কোম্পানীগঞ্জে ১০৫ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন বড় প্রজাতির মাছ ও সাত লাখ ২৫ হাজার পোনা ভেসে গেছে। বড় মাছে ক্ষতি এক কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার ও পোনায় ৩৫ লাখ টাকা। এছাড়া অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সাড়ে আট লাখ টাকা। সব মিলিয়ে চাষিদের ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৭৩ লাখ ১০ হাজার টাকা।

জকিগঞ্জ

জকিগঞ্জে ২২৬ মেট্রিক টন বড় প্রজাতির মাছ ও ১৪ লাখ ৬০ হাজার পোনা ভেসে গেছে। বড় মাছে ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ কোটি ৭২ লাখ ও পোনায় ৪২ লাখ টাকা। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ছয় লাখ টাকা। সব মিলিয়ে উপজেলার চাষিদের ছয় কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

কানাইঘাট

কানাইঘাটে ভেসে গেছে ১১০ মেট্রিক টন বড় প্রজাতির মাছ ও ছয় লাখ পোনা। বড় মাছে ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি ৫৪ লাখ ও পোনায় ১৮ লাখ টাকা। চাষিদের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ১০ লাখ টাকার। সব মিলিয়ে উপজেলায় মাছ চাষে ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৮২ লাখ টাকা।

ওসমানীনগর

ওসমানীনগরে আট লাখ টাকার বড় প্রজাতির মাছ ও ১২ লাখ টাকার পোনা ভেসে গেছে। অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ছয় লাখ টাকার। সব মিলিয়ে উপজেলার চাষিদের ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

বালাগঞ্জ

বালাগঞ্জে ৩৩ লাখ টাকার বড় প্রজাতির মাছ ও ২২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পোনা ভেসে গেছে। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে ৬১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

চাষিদের ক্ষতি অপূরণীয় 

জেলা মৎস্য কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক সীমা রাণী বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যায় সিলেটের সাত উপজেলার ৬১ ইউনিয়নের আট হাজার ৪৯৪টি পুকুর, দিঘী ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। অবকাঠামোসহ সব মিলিয়ে মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি ৬১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। চাষিদের জন্য এটি অপূরণীয় ক্ষতি।’

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের আর্থিক কোনও সহযোগিতা দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাছ চাষিদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার মতো আমাদের কোনও খাত নেই। তবে এবারের বন্যায় কোনও জেলের মৃত্যু কিংবা আহত হয়নি। একইসঙ্গে কোনও নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’

বন্যাকবলিত ছয় লাখ ৫৭ হাজার মানুষ

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, সিটি করপোরেশনের ২৮ ওয়ার্ডসহ আট উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা ৮৩০টি। বন্যাকবলিত হয়েছেন ছয় লাখ ৫৭ হাজার ১৬২ জন। জেলা প্রশাসনের ৫৭১ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন চার হাজার ৫৫৭ জন।

জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ওমর সানি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যায় প্লাবিত সিটি করপোরেশন এলাকার ২৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৫টির পানি নেমে গেছে। বাকি ১৩ ওয়ার্ডে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। অপরদিকে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় দুই হাজার ১১ জন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টি হলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। বন্যা পরবর্তি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারিভাবে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৩৪ দশমিক চার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও হতে পারে।’

Source link

Related posts

বগুড়ায় মুজিব মঞ্চ, পুলিশ বক্স ও আ.লীগ কার্যালয়ে আগুন

News Desk

পাশের দেশে পাচারকালে ৭ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার, পাচারকারী আটক

News Desk

আরো এক সপ্তাহ বাড়লো লকডাউন

News Desk

Leave a Comment