ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের পর জলোচ্ছ্বাসে খুলনার আট হাজার ৮৭৫ পুকুর ও মৎস্যঘের ভেসে গেছে। জোয়ারের পানিতে একাকার হয়ে গেছে সব। ফলে দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার মৎস্যজীবীদের অন্তত ১৬৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬৮ ইউনিয়ন, দুটো পৌরসভা, সিটি করপোরেশন দুটো ওয়ার্ড এলাকায় রিমালের প্রভাব পড়েছে। এতে দুর্গত মানুষের সংখ্যা ধরা হয়েছে চার লাখ ৫২ হাজার। এর মধ্যে এক লাখ ৩৩ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছিল। বাকিরা নিজেদের বাড়িতেই ছিলেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, রিমালের তাণ্ডবে স্বাভাবিকের চেয়ে ছয়-সাত ফুট উঁচু জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে দাকোপ ও কয়রা উপজেলার পাঁচটি স্থান ভেঙে গেছে। পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ না ভাঙলে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মৎস্যঘের।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সাত ২৮৩ হেক্টর জমির পাঁচ হাজার ৫৭৫টি মৎস্যঘের ও ৩০৭ হেক্টর জমির তিন হাজার ৩০০টি পুকুর। ফলে এক হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন সাদা মাছ ও এক হাজার ৭২৪ মেট্রিক টন চিংড়ি ভেসে গিয়ে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে ১৬৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তাদের।
সোমবার (২৭ মে) রাত ৯টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল হুসেইন খাঁন। তিনি বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসে ১৬৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার মাছ ভেসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। এর মধ্যে বেশিরভাগ চাষি দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার।’
পাইকগাছা উপজেলার সোনাদানা এলাকার মৎস্যঘেরের মালিক আমিনুর সরদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ঘেরে ১২-১৫ লাখ টাকার চিংড়ি মাছ ছিল। রবিবার রাতে জোয়ারের পানিতে সব ভেসে গেছে। আমার একার নয়, আশপাশের সব ঘের ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।’
মাছ চাষিদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে সোলাদানা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) শেখ আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোলাদানার বিলের সব ঘের পানিতে ভেসে গেছে। চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এই ক্ষতি অপূরণীয়। ঘের ভেসে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন রাস্তাঘাটে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন।’
সোমবার বিকালে জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অন্তত ৭৭ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২১ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৫৬ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বটিয়াঘাটায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। উপকূলের অনেক স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত খুলনা শহর এবং উপকূলীয় উপজেলায় দমকা হাওয়াসহ মাঝারি ও ভারী বৃষ্টি অব্যাহত আছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবদুল করিম বলেন, ‘বন্যাদুর্গতদের আমরা সার্বিক সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি। উপজেলাগুলোতে নগদ টাকা পাঠানো হবে। তবে উপজেলা থেকে পাঠানো তথ্যমতে ৪০টির মতো জায়গা দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এটাই সবচেয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
খুলনা পওর বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী নির্বাহী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘দাকোপের খলিশা, পানখালী, বটবুনিয়া ও কামিনিবাসিয়া এবং কয়রার দশালিয়া বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এই পাঁচটি জায়গা মিলে ১৫০ মিটারের মতো বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। দাকোপ, বটিয়াঘাটা, কয়রা ও পাইকগাছায় আরও ৬০টা পয়েন্টে পানি উপচে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাইকগাছায় অনেক জায়গায় ওভার ফ্লো হয়েছে। সবমিলিয়ে ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও জোরে বাতাস হচ্ছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।’