ভোটের মাঠে সাড়া ফেলেছেন রানী, চ্যালেঞ্জ দিলেন জি এম কাদেরকে
বাংলাদেশ

ভোটের মাঠে সাড়া ফেলেছেন রানী, চ্যালেঞ্জ দিলেন জি এম কাদেরকে

রংপুর-৩ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল প্রতীক) আনোয়ারা ইসলাম রানী। দিনরাত গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের কাছ থেকে অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছেন দাবি করে জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তৃতীয় লিঙ্গের এই প্রার্থী। তার সমর্থকদের দাবি, প্রচার-প্রচারণায় জাপার হেভিওয়েট প্রার্থীকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে মাঠে আছেন আনোয়ারা ইসলাম রানী। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে রংপুর নির্বাচনি এলাকা রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৫টি ওয়ার্ড আর পাঁচ ইউনিয়নে চষে বেড়াচ্ছেন। প্রতিটি গণসংযোগে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নিচ্ছেন।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তুষার কান্তি মন্ডল দলের নির্দেশে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় জি এম কাদের একমাত্র হেভিওয়েট প্রার্থী। ভোটের মাঠে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী রানী আর জাসদের শহিদুল ইসলাম সরব থাকলেও অন্য প্রার্থীরা অনেকটাই নীরব।

জি এম কাদের সম্প্রতি দুই দিনের সফরে রংপুরে এসে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে কর্মী সভা করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও কোনও গণসংযোগ করেননি। প্রথমদিকে তার পোস্টার লাগানো হয়নি। তবে এখন বিভিন্ন জায়গায় জি এম কাদেরের পোস্টার ঝুললেও নেই প্রচার-প্রচারণা। যদিও মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির নেতারা বিকালের পর নগরীর কিছু এলাকায় লিফলেট বিলি করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী। তিনি বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে বলছেন, জাতীয় পার্টি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রংপুর -৩ আসনে নির্বাচিত হয়ে আসছে। তারা ভোট নেয় এরপর ঢাকা চলে যায় জনগণের জন্য কাজ করে না। এবারের নির্বাচনে জনগণ আর ভুল করবে না বলে দাবি তার।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর লালবাগ, কলেজ রোড, সিটি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী রানী এ প্রতিনিধিকে বলেন, রংপুর-৩ আসন একসময় জাতীয় পার্টির দুর্গ ছিল- এটা যেমন সত্যি তেমনি বিগত দিনে এই আসনের তেমন কোনও উন্নয়ন তারা করতে পারেননি। মানুষ তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত কিছুই পায়নি। বরং যারা বিগত দিনে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছে তারা যে ওয়াদা করেছিল তার কিছুই বাস্তবায়িত করতে পারেনি। উল্টো ভোট নিয়ে তারা ঢাকায় চলে গেছে। কালেভাদ্রে তাদের দেখা মিলেছে। তবে এমপি হিসেবে যে সেবা পাওয়ার কথা তার কিছুই পায়নি এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।

তিনি বলেন, জনগণ পরিবর্তন চায়, একজন যোগ্য নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়। বার বার ঘুঘু এসে ধান খেয়ে গেছে এবার তা হবে না। জনগণ সত্যিকার যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন, জি এম কাদের তো লালমনিরহাট সদর আসনের এমপি। তাকে রংপুর নগরীর মানুষ ভালোভাবে চেনেও না। তার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন, এবার আর বাইরের লোককে ভোট দেবে না ভোটাররা। সুষ্ঠু, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন।

এদিকে, তৃতীয় রানীর সঙ্গে দিনভর গণসংযোগে অংশ নেওয়া ৬০ বছরের বৃদ্ধ আবুল হোসেন বলেন, এবার রংপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ কোনও প্রার্থী রাখেনি। জি এম কাদেরের প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে রানী ছাড়া আর কারও কোনও প্রচারণা নেই। মাঠে একাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষ তাকে গ্রহণ করেছে। আমরা নিঃস্বার্থভাবে তার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছি।

আরেক সমর্থক ব্যবসায়ী মুনির উদ্দিন বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী হলেও রানী শিক্ষিত মার্জিত ভাষায় কথা বলেন। তার সঙ্গে শত শত মানুষ প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এটাই প্রমাণিত হয় এবার জিএম কাদেরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি।

রিকশাচালক আলাউদ্দিন বলেন, আমরা জাপার সমর্থক। জি এম কাদের প্রার্থী হয়েছেন, কিন্তু তার কোনও খবর নেই। মানুষ চায় প্রার্থী নিজে আসুক জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করুক। কিন্তু কেন জানি না জাপার নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছেন। তারা ভেবেই নিয়েছেন তার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবে পচা শামুকেও পা কাটে- এবার মাঠের অবস্থা রানীর দিকে।

তবে জাতীয় পার্টির এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, জি এম কাদের এর আগে দুই দিন রংপুরে অবস্থান করেছেন। শনি ও রবিবার আসবেন। তিনি দলের চেয়ারম্যান, নিজের আসনে পড়ে থাকলে চলবে না। বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার। তবে জাতীয় পার্টির দুর্গ রংপুর ছিল, আছে এবং থাকবে বলেও মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য, রংপুর-৩ (সিটি করপোরেশন ও সদর) আসনে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের (লাঙ্গল), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুর রহমান রেজু (একতারা), বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক (ডাব), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) শহিদুল ইসলাম (মশাল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম (আম) ও তৃতীয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী (ঈগল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

Source link

Related posts

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা

News Desk

পটুয়াখালীতে কালবৈশাখী ঝড়ে দুজনের মৃত্যু, অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

News Desk

২ ঘণ্টায় রোগীর বিল ২১ হাজার টাকা

News Desk

Leave a Comment