রাজধানীর মগবাজারে একটি ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে সাতজনে দাঁড়িয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এদের পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া আহত হয়েছেন ৬০ জনেরও বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে ১৭ জনকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার (২৭ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকায় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ংয়ের শো-রুম লাগোয়া ভবনে এ বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় সেখানে ভয়াবহ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দেখা যায়।
খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে তাদের তরফ থেকে এ দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর দেয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘৭টা ৩৪ মিনিটে আমরা খবর পাই। আমাদের টিম এখানে আসে। এটি একটি তিনতলা ভবন। এর নিচতলায় ফাস্টফুডের দোকান (শর্মা হাউস), দ্বিতীয় তলায় (ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড) সিঙ্গারের একটি গোডাউন ছিল।
‘আমরা ধারণা করছি, গ্যাস বা এ জাতীয় কোনো কিছুর মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। আমরা পরীক্ষা করছি। ৩৯ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন। মোট আহত হন ৬০ জনেরও বেশি মানুষ। এই ঘটনায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। তখন বিস্তারিত জানা যাবে।
নাশকতা নয়, গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণ
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, এখন পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের ঘটনাটি কোনো নাশকতা নয়। এখানে বোমা বিস্ফোরিত হলে স্প্লিন্টারের আঘাতে বাসসহ আশপাশের লোকজন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত। এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় গ্যাসের বিস্ফোরণ।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বিস্ফোরিত ভবনের নিচতলার শর্মা হাউসে গ্যাস জমে ছিল। এ কারণে বিস্ফোরণের সূত্রপাত ঘটে থাকতে পারে।
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ ভবন
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, বিকট শব্দের এ বিস্ফোরণে ১২টি বাণিজ্যিক ভবন ও দুটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি ভবনে ছিল অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘অপরাজেয় বাংলা’র কার্যালয়ও। এছাড়া সড়কে চলতে থাকা তিনটি যাত্রীবাহী বাসও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যে ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো হলো- আউটার সার্কুলার রোডের ৭৯ নম্বর ভবন, রাশমনো স্পেশাইলাজড হাসপাতাল, নজরুল শিক্ষালয়, আড়ং শোরুমের ভবন, বিশাল সেন্টার, ডম-ইনো’র বাণিজ্যিক ভবন, বেস্ট বাই শোরুমের ভবন, বেঙ্গল ট্রেডস সেন্টার ভবন, ক্যালকাটা ড্রাই ক্লিনার্সের ভবন, মগবাজার প্লাজা, হামদর্দ চিকিৎসা ও বিক্রয় কেন্দ্র এবং ভিশন অ্যাম্পোরিয়ামের শোরুম থাকা ভবন।
এমন ভয়াবহ শব্দ জীবনেও শুনিনি
ওই ভবনে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী শাহাদত আলী বলেন, ‘আমি মনে করেছি আমাদের এখানে এসি বিস্ফোরণ অথবা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। কিন্তু কীভাবে এই বিস্ফোরণ তা জানা যাচ্ছে না।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বাবুল হোসেন বলেন, ‘এমন ভয়াবহ শব্দ জীবনেও শুনিনি। মনে হয়েছে ভবনটা কেঁপে উঠল। বিস্ফোরণের শব্দে ভবনের কাচ ভেঙে পড়তে শুরু করে।
শফিক নামে একজন পথচারী বলেন, ‘হঠাৎ করে বিকট শব্দে আঁতকে উঠি। চোখের সামনে তাকিয়ে দেখি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কখনো এই ধরনের বিস্ফোরণ দেখিনি। জীবনে এমন ভয়ংকর কিছু এভাবে কাছ থেকে দেখিনি। অনেক মানুষ হতাহত হয়েছেন।