ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়ার দাবিতে সাড়ে নয় ঘণ্টা ধরে শিক্ষা বোর্ড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ফল বাতিল করতে হবে। সব বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে সবাইকে উত্তীর্ণ করে দিতে হবে।
রবিবার (২০ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে বোর্ডের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এতে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ৯টায় বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এইচএসসির ফল প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ এবং শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করেন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে নগরের কাঠগোলা এলাকার ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ফল বাতিল চেয়ে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটকে পুলিশ অবস্থান নেয়। বোর্ডের সামনের সড়কে ইট ফেলে ও রাস্তায় বসে অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধরা। এতে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর পৌনে ১টার দিকে জোরপূর্বক শিক্ষা বোর্ড ভবনের প্রধান ফটকের বাধা উপেক্ষা করে ভেতরে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবু তাহেরের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে পুনরায় এইচএসসির ফল প্রকাশের জন্য বিকাল ৩টার দিকে বোর্ডে আবেদন করে ওই স্থান ত্যাগ করেন। এরপর বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করতে গিয়ে আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে আবারও সড়ক অবরোধ করেন তারা। সেইসঙ্গে টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেন। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে রাখেন তারা।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আজকের মধ্যে সিদ্ধান্ত চাচ্ছেন। তারা রাত ৯টা পর্যন্ত বোর্ডের সামনে অবস্থান করেছেন। পরে স্মারকলিপি দিয়ে ফিরে যান। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুতই এটির সমাধান করা দরকার।’
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে গরমিল করে ফল তৈরি করা হয়েছে। এই ফল সঠিক হয়নি। সব সাবজেক্ট ম্যাপিং করে সবাইকে উত্তীর্ণ করে দিতে হবে। আমরা বৈষম্যহীন ফল প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। তাই আবারও ফল প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করা হয়েছে।
নগরীর মুসলিম গার্লস কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবা আক্তার বলেন, ‘আমি ফেল করার মতো পরীক্ষা দিইনি। তবু আইসিটিতে অকৃতকার্য হয়েছি। আমি মনে করি, আমাকে ফেল দেখানো হয়েছে।’
ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. সফিউদ্দিন সেখ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা তাদের ফল মেনে নিতে পারছেন না। তাই আন্দোলন করছেন। তাদের স্মারকলিপি আমরা গ্রহণ করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান করা হবে।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে কার্যালয়ে বোর্ডের ১০ জন কর্মকর্তা আটকা পড়েছেন বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. শামছুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় প্রশাসক, আন্তবোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। সেখান থেকে কোনও সিদ্ধান্ত এলে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলে শিক্ষার্থীদের জানানো হবে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্মারকলিপি আমরা আন্তবোর্ডে পাঠিয়ে দেবো। শিক্ষার্থীরা যদি কোনও পরীক্ষকের কারণে ফল খারাপ করে থাকে, তাহলে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ফল পুনঃনিরীক্ষণ করবো।’
গত ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড থেকে এইচএসসির ফল ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন জানানো হয়, চলতি বছর বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৭৭ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩৭ হাজার ৪৫৩ ও ছাত্রী ৪০ হাজার ১৬৮ জন। পরীক্ষায় পাস করেছেন ৪৯ হাজার ৬৯ জন। পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্র পাস করেছেন ২২ হাজার ৯৩৫ জন এবং পাসের হার ৬১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর ছাত্রী পাস করেন ২৬ হাজার ১৩৪ জন এবং তাদের পাসের হার ৬৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন চার হাজার ৮২৬। তাদের মধ্যে দুই হাজার ১০৯ জন ছাত্র ও দুই হাজার ৭১৭ জন ছাত্রী। বোর্ডে গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার এবার। এ বছর আইসিটি ও ইংরেজি বিষয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন।