টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গত অক্টোবর মাসের শুরুতে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। এ অবস্থায় আগাম জাতের আমন ধান নিয়ে শঙ্কায় পড়েন চাষিরা। এখন সেই শঙ্কা কেটে গেছে। কারণ ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে পেকেছে আগাম আমন। এখন সেই ধান কাটতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এলাকার চাষিরা। ফলন ভালো হওয়ায় খুশি তারা। সেইসঙ্গে ভালো মজুরিতে কাজ করতে পেরে খুশি শ্রমিকরাও।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈশ্বরগঞ্জের রাজিবপুর ইউনিয়নের রামগোবিন্দপুর গ্রামে ধান কাটতে শুরু করেছেন চাষিরা। এরই মধ্যে অনেক ক্ষেত থেকে ধান কাটা হয়ে গেছে। কেউ কেউ মাড়াই করে ঘরে তুলছেন।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগাম আমনের ভালো ফলন হয়েছে। এজন্য কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। ইতোমধ্যে অনেক জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। চাষিরা ধান বিক্রি করতে শুরু করেছেন। ময়মনসিংহ বিভাগে চলতি মৌসুমে ছয় লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচ লাখ ৯৮ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ৭৯৭ মেট্রিক টন।
চলতি মৌসুমে রাজিবপুর ইউনিয়নের রামগোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক মেহেদী হাসান এক একর জমিতে আগাম জাতের আমন আবাদ করে ঘরে তুলেছেন ৪৫ মণ ধান। শুরু থেকে জমি প্রস্তুত, বীজতলা প্রস্তুত, চারা রোপণ, সার প্রয়োগ, কৃষিশ্রমিক বাবদ তার খরচ হয়েছে ২৭ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা। এই হিসাবে মেহেদীর ৪৫ মণ ধান বিক্রি করে খরচ বাদে আয় হবে ২৭ হাজার টাকা। আয়ের টাকায় সামনের দিনে জমিতে সরিষা ও বোরো আবাদ করবেন জানান এই কৃষক।
এবার বন্যায় আমনের ক্ষতির শঙ্কার মধ্যেও ভালো ফলন হয়েছে জানিয়ে মেহেদী হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার মতো এলাকার অনেকে আগাম আমন আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। ধান ঘরে তোলার পর এখন সরিষা আবাদে ব্যস্ত এলাকার চাষিরা। সরিষা ঘরে তুলে ওই জমিতে বোরো আবাদ করবো আমরা।’
শুধু মেহেদী নন, আগাম আমনের ভালো ফলন হওয়ায় এবং বেশি দাম পেয়ে খুশি জেলার কৃষকরা। তারা এখন মাড়াই শেষে ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ফলন ভালো হয়েছে জানিয়ে হরিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, ‘এই ধান বিক্রি করে ধারের টাকা পরিশোধ করবো। সেইসঙ্গে সামনের দিনে কৃষি আবাদে কাজে লাগাবো।’
আগাম আমন ধান চাষে খরচের চেয়ে লাভের পরিমাণ বেশি উল্লেখ করে জেলা সদরের কৃষক আবু তাহের বলেন, ‘কারণ প্রথম দিকে ধান কাটতে পারলে ধানের দাম ভালো পাওয়া যায়। বাজারে চাহিদা থাকে বেশি। এ কারণে আমরা আগাম জাতের আমন ধান করে লাভবান হচ্ছি।’
এদিকে, দীর্ঘদিন বসে থাকার পর ভালো মজুরিতে কাজ করতে পেরে খুশি স্থানীয় কৃষিশ্রমিকরা। কৃষিশ্রমিক দুলাল মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েক মাস কোনও কাজ ছিল না। এখন আমন ধান কাটার ব্যস্ততা বেড়েছে। ভালো মজুরি পাচ্ছি। ফলে ঘরে অভাব নেই।’
আমনের ফলন ভালো হয়েছে জানিয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিভাগের উপপরিচালক সালমা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪ শতাংশ জমির আগাম আমন ধান কাটা হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। এবার বন্যায় ময়মনসিংহ বিভাগে ৭৫ হাজার ৪২৯ হেক্টর জমির আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।’