ময়লা-আবর্জনায় ড্রেন বন্ধ, দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়েছে সড়ক
বাংলাদেশ

ময়লা-আবর্জনায় ড্রেন বন্ধ, দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়েছে সড়ক

সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে পৌর নাগরিকেরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। বের হলেও জলাবদ্ধতার কারণে চলাফেরায় নাগরিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয়দের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ে লাভবান হলেও প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার এমন দুরবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পৌর শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলেও পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পৌরবাসী। এ অবস্থায় শ্রীপুর পৌরসভার সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপাতত কিছুই করার নেই।’

পৌর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেড়-দুই ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে পৌরসভার ২ নম্বর সিঅ্যান্ডবি থেকে ধনাই ব্যাপারী উচ্চবিদ্যালয় সড়ক, ধনাই ব্যাপারী উচ্চবিদ্যালয় সড়ক থেকে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সড়ক, মাওনা চৌরাস্তা, বারতোপা সড়কের বর্ণমালা মোড়, মসজিদ মোড় থেকে দারগারচালা মোড়, শ্রীপুর থানা মোড়, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সামনের অংশ, ১ নম্বর সিঅ্যান্ডবি এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা হারিছ উদ্দিন সড়ক এবং নতুন বাজার থেকে কড়ইতলা সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনগুলো পরিষ্কার ও সংস্কার না করার কারণে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি বলে অভিযোগ নাগরিকদের।

পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তৈয়ব মণ্ডল, কাজী আকতার হোসন এবং জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সকালে দুই ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে পৌরসভার পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হয়ে অনেকে দুর্ভোগে পড়েছেন।

২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পৌরসভা কী কাজ করে সেটাই বুঝতে পারছি না। সঠিক সময়ে পৌরসভার নাগরিকেরা ট্যাক্স দিলেও সেবার দিক দিয়ে কিছুই পাচ্ছি না। জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত সময়ের মধ্যে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার দাবি নাগরিকদের।’

ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ বলেন, ‘পৌরসভার বিভিন্ন জায়গায় পৌর কর্তৃপক্ষ ড্রেন নির্মাণ করেছে ঠিকই, কিন্তু তা কোনও কাজে আসছে না। ড্রেনগুলো অগভীর এবং ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে সড়কে ওঠে আসে। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ নাগরিকদের।’

স্থানীয় বাড়িওয়ালা নজরুল ইসলাম ও জাকির হোসেন বলেন, ‘ভারী বৃষ্টির কারণে বাসাবাড়িতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। নিয়ম না মেনে ড্রেন নির্মাণ এবং নির্মিত ড্রেনগুলো সঠিক তদারকি না করার কারণে পৌরবাসীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

কড়ইতলা এলাকার বাসিন্দা আমীর হোসেন বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে থাকায় হেঁটে চলাচল করা যায় না। বৃষ্টির পানি সড়কে জমে থাকলেই রিকশাচালকেরা ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। ২০ টাকার ভাড়া নেয় ৫০ টাকা। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় পৌরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

বাংলাদেশ রিভার অ্যান্ড নেচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং শ্রীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, ‘দুই ঘণ্টার আকস্মিক বৃষ্টিতে পৌরসভার বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ী ও বাসাবাড়ির লোকজনকে বাধ্য হয়ে ময়লা পানিতে হাঁটাহাঁটি করতে হচ্ছে। দুর্ভোগ যেন পৌরবাসীর পিছু ছাড়ছে না।’

শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শাহেদ আকতার বলেন, ‘কাউন্সিলরের মাধ্যমে তথ্য নিয়েছি। যেসব এলাকায় ড্রেন ভেঙে গেছে ওই সব এলাকায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেরামতের উদ্যোগ নেবো। তা ছাড়া পৌরসভায় প্রকৌশল বিভাগে জনবলসংকট রয়েছে। ঘুরে ঘুরে দেখার মতো সময়ও নাই, লোকও নাই আমার।’

শ্রীপুর পৌরসভার সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব স্থানে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে সেসব স্থানে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিয়ে তা সমাধান করা হবে। ঈদ উপলক্ষে পৌরসভার বেশির ভাগ কর্মী ছুটিতে আছেন। আপাতত তেমন কিছুই করার নেই।’

Source link

Related posts

সাহসী নারীদের আজীবন সংগ্রামের কারণেই বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে: স্পীকার

News Desk

হবিগঞ্জে পানিবন্দি আড়াইশ’ পরিবার

News Desk

বিরল ৪ সাদা বাঘ শাবকের নাম পদ্মা-মেঘনা-সাঙ্গু-হালদা

News Desk

Leave a Comment