কুষ্টিয়ার মিরপুরে পৌনে তিন ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা এলাকাবাসী। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত উপজেলার বহলবাড়িয়া এলাকার কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে বাস ও ট্রাকের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। পরে পুলিশের আশ্বাসে মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।
জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম, বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাহেবনগর, বারুইপাড়া ইউনিয়নের মির্জানগরের অনেক এলাকা পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি, বসতবাড়িসহ অনেক স্থাপনা। পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে।
এর আগে পদ্মা নদীতে তিনটি জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের টাওয়ার পোল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চরম হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী জাতীয় মহাসড়ক। শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষদের। অনেকেই নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কায় বসতবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। এসব এলাকার মানুষ ফসলি জমি ও বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, পদ্মা নদীর ভাঙন রোধ করার জন্য অনুমোদিত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তবে অজানা কারণবশত সেটি বিলম্ব হচ্ছে। অবিলম্বে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন স্থানীয় সাহেবনগর ও মির্জানগর এলাকায় দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীর পাড়ে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করতে আসা শ্রমিকরা।
স্থানীয় মোহাম্মদ হারুন নামের শ্রমিক নদীর ভাঙন দেখিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের এখানে থাকার ঘর ছিল। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে নদী সবকিছু নামিয়ে নিয়ে গেছে। থাকার ঘরটাও সরিয়ে নিতে পারিনি। এখনও আতঙ্ক, কখন কী হয়।’
নদীপাড়েই কথা হয় মো. লিটন নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও এখানে দুই বিঘার মতো জায়গা ছিল। এখানে ঘরবাড়ি, রান্নাঘর ছিল। এক রাতের ভেতরে নদীতে সবকিছু নেমে গেছে। আশেপাশে যে কয়টা ঘর আছে, আমরা ভয়ের ভেতরে আছি, আবার কখন সবকিছু নদীতে চলে যায়। আমরা শক্তি পাচ্ছি না এখানে থাকার। ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ করতে না পারলে এখানকার ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবকিছু নদীগর্ভে চলে যাবে।’
স্থানীয় নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অপু বলেন, ‘আমাদের এলাকার অংশের পদ্মা নদীতে ছয়টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে। মূল চ্যানেলটি গেছে আমাদের এই জনবহুল এলাকার মধ্য দিয়ে। ফলে বর্ষা শেষ হওয়ার পর এখনও বড় ধরনের ভাঙন হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে। কিন্তু এখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানুয়ারিতে কাজের কথা বলছেন। দ্রুত কাজ শুরু না হলে আবারও কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
মিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম জানান, মিরপুরে পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। পরে আলোচনার মাধ্যমে তারা অবরোধ তুলে নেন।