কয়েকদিন পরই ঈদুল ফিতর। এ উপলক্ষে যশোরের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের কেনাকাটায় স্বস্তি দিতে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করেছে আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা। ঈদে যেন এই মানুষরা অল্প দামে মাংস, পোলাওয়ের চাল ও চিনি কিনতে পারেন, সে কারণে মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সংগঠনটির আয়োজন ছিল। সকাল থেকে শহরের খড়কি এলাকায় মাংস, চাল, চিনি, সেমাই, গুঁড়ো দুধ, মসলা, বাদাম ও কিসমিসের পসরা সাজিয়ে রাখেন কর্মীরা।
আগে থেকেই তারা পাড়া ও মহল্লা ঘুরে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষদের ৫০০ জনের তালিকা প্রস্তুত করেন। সেই তালিকা অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষ-শিশুরা টোকেন নিয়ে হাজির হন আইডিয়ার উঠানে। যেখানে তাদের কর্মীরা সারিবদ্ধ হয়ে বসে প্রথমে নাম লিপিবদ্ধ ও টাকা গ্রহণ করে আরেকটি স্লিপ (পে স্লিপ) ধরিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতাদের। বিপণনের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের কাছে টোকেনটি দিলে সিরিয়াল অনুযায়ী তারা খাদ্যদ্রব্যগুলো প্যাকেটভর্তি করে দিচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, কয়েকশ’ মানুষ আইডিয়ার উঠানে হাজির হয়েছেন। ঈদ সামনে রেখে আজকের আয়োজনের আগেও তারা কমবেশি ৭ থেকে ৮ বার এখানে এসেছেন। কারণ, গত ২৭ মার্চ থেকে এখানে আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে প্রথম ‘লস প্রজেক্ট’ নামে একটি কর্মসূচি চালু হয়। সেই কর্মসূচির অধীনে ৫০০ মানুষ, যারা প্রকাশ্যে কারও কাছ থেকে কিছু চাইতে পারেন না, আবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেশ খানিকটা নাজেহাল, তাদের জন্যে ওই কর্মসূচি চালু করা হয়।
বাজার করতে আসা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নূরজাহান বলেন, ‘বাজারে এসে মাংস, দুধ, সেমাই, চিনি ও পোলাও চাল কিনেছি। এগুলো বাইরের চেয়ে অর্ধেক কম দামে কিনতে পেরেছি।’
খড়কী দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা ভ্যানচালক ইলিয়াস আলী বলেন, ‘বাইরে মাংসের দাম কমপক্ষে ৬৫০ টাকা। সেখানে আমরা তিনশ’ টাকায় কিনেছি। এছাড়া সেমাই, চিনি ও পোলাও চালও অল্প দামে কিনেছি।’
সংগঠনটির কর্মীরা জানান, তারা ৫০০ জনের তালিকা করলেও এ পর্যন্ত ৪৭২ জন সপ্তাহে দুই দিন করে অল্প দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনেছেন। আজ লস প্রজেক্টের শেষ দিনে আশা করছেন, ইতোমধ্যে যারা এখান থেকে স্বল্প দামে কেনাকাটা করেছেন, তারা সবাই আসবেন।
আজকের বাজারে অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে সংযোজন হয়েছে গরুর মাংস (১ কেজি ৩০০ টাকা), পোলাও চাল (চিনিগুঁড়া, ১ কেজি ৫০ টাকা) ও চিনি (১ কেজি ৫০ টাকা)। তবে, এই তিনটি পণ্যের সঙ্গে ঈদ উপহার হিসেবে (বিনামূল্যে) ক্রেতারা পাবেন লাচ্ছা সেমাই, গুঁড়ো দুধ, বাদাম, কিশমিশ ও মাংসের জন্যে গুঁড়ো মসলা।
লস প্রজেক্টের সমন্বয়ক হারুন অর রশিদ বলেন, আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা রমজান মাস উপলক্ষে ‘লস’ করার উদ্দেশ্যেই এই উদ্যোগ। রমজান মাসজুড়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ৫০০ পরিবারকে বাজারমূল্যের অর্ধেক দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫০ টাকা কেজি দরের চাল ২৫ টাকায় (পাঁচ কেজি), ১৬৮ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল ১২০ টাকায় (এক লিটার), ১৫০ টাকার খেজুর ৮০ টাকায় (এক কেজি), ৩৫০ টাকা দরের খেজুর ২০০ টাকায় (এক কেজি), ৪০ টাকা দামের দুই কেজি আলু ২০ টাকায়, ৫০ টাকার চিড়া ৩৫ টাকায় (এক কেজি), ৮০ টাকার ছোলা ৫০ টাকায় (এক কেজি), ৮০ টাকা কেজি দরের চিনি ৫০ টাকায় (এক কেজি), ৯০ টাকা দরের মসুর ডাল ৬০ টাকায় (এক কেজি) ও ৩০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ ১৫ টাকায় (এক কেজি) বিক্রি করা হয়। সপ্তাহে রবি ও মঙ্গলবার এই পণ্য কেনার সুযোগ পান তারা।
আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি এম এম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা ‘‘আমরা ঠকতে চাই’’ এমন একটা স্লোগান নিয়ে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। যার মাধ্যমে রমজান মাসজুড়ে ৯টি পণ্য মানুষের মাঝে প্রায় অর্ধেক দামে সরবরাহ করা হয়। বিষয়টি মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশ ও দেশের বাইরে থাকা অনেকের মনে নাড়া দেয়। যার ফলে তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন এবং আজকের এই আয়োজন তারই ধারাবাহিকতা।’