জামালপুরে একটি সংস্থার কার্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদান করার ঘটনা ঘটেছে। এসব পরীক্ষার্থীরা আগামীকাল রবিবার (৩০ জুন) থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।
শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে জামালপুর শহরের বেলটিয়া এলাকার মানাব (মাদককে না বলি) নামে একটি সংস্থার কার্যালয়ের সামনে বেশ কিছু এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ভিড় করতে দেখা যায়। ওই সংস্থার একটি কক্ষ থেকে শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে প্রবেশপত্র বিতরণ করা হয়।
জানা যায়, জামালপুর শহরের শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রমের অনুমোদন থাকলেও উচ্চমাধ্যমিকের কোনও অনুমোদন নেই। তবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এখান থেকে কেউ এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। তবে শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলাম সেলিম তার কলেজসহ অন্যান্য কলেজের প্রায় তিনশ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর ইসলামপুর উপজেলার গুঠাইল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মলমগঞ্জ মডেল কলেজ, বেলগাছা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরিষাবাড়ী উপজেলার সানাকৈর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদান করেন।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) প্রায় একশ এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র না দেওয়ায় তাৎক্ষণিক ওই পরীক্ষার্থীরা শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে আন্দোলন শুরু করেন।
শনিবার শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অদূরে মানাব কার্যালয়ে প্রবেশপত্র নিতে আসা কয়েকজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, তারা বিভিন্ন কলেজ থেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) নিয়ে শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়েছেন। কলেজে ভর্তি ও অ্যাকাডেমিক ফি ছাড়াও রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশপত্রের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে পনেরো থেকে বিশ হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র পেলেও অনেকেই রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র না পাওয়ায় আন্দোলন শুরু করেন। পরে শনিবার সবাইকে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়।
শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর জানান, যেসব পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে তারা কেউ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী না। অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলাম সেলিম ব্যক্তিগতভাবে এসব পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশপত্র দিচ্ছেন। তার এই কাজের সঙ্গে শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কোনও শিক্ষক বা কর্মচারী জড়িত না। অধ্যক্ষের এই কর্মকাণ্ডের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ায় তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান উপাধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর।
এ ব্যাপারে শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বোর্ডে আছি। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দিতে কাজ করছি।’
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম মোজাম্মেল হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে শুনেছি। তবে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রবেশপত্র প্রদানের কোনও নিয়ম নেই। অন্য সংস্থা থেকে প্রবেশপত্র প্রদানের ব্যাপারে অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সুমী আক্তার বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের অনুমোদন নেই। তাই তারা প্রবেশপত্র প্রদান করতে পারবে না। অন্য একটি সংস্থা থেকে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র প্রদানের বিষয়টি জানি না। তবে খোঁজ নিচ্ছি, সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’