তীব্র শীতের কারণে চুয়াডাঙ্গায় মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি)। তবে এদিন জেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একই নির্দেশনা দিলেও দুই রকম অবস্থা অর্থাৎ সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে চুয়াডাঙ্গায়। এতে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিষয়টি নিয়ে খোদ বিপাকে পড়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারাও।
অভিভাবকরা বলেছেন, একটি সিদ্ধান্তে আসা উচিত শিক্ষা কর্মকর্তাদের। শিক্ষকরা বলেছেন, ছুটির ঘোষণা রাতে আসায় পরদিন তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর কাছে ছুটির ঘোষণা না পৌঁছায় পরদিন সকালে ঠিকই বিদ্যালয়ে চলে আসছে। এতে বিপাকে পড়ছেন শিক্ষকরাও।
স্থানীয় সূত্র জানায়, একদিকে মাঘের হাড় কাঁপানো শীত, অন্যদিকে বৃষ্টি। দুইয়ে মিলিয়ে জেলার মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে জেলার কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টি হয়। গুঁড়ি গুঁড়ি এই বৃষ্টি আধাঘণ্টা পর থেমে যায়। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা ২০ মিনিটের দিকে আবারও মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। আধাঘণ্টা পর থেমে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষজন।
জেলা আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বুধবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, বুধবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে বিদ্যালয়ে হাজির হয় শিক্ষার্থীরা। একইভাবে বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয়ে এসে দেখে ছুটি দেওয়া হয়েছে। পরে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে তারা জানতে পারে বুধবার রাতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার জেলার ১৪১টি মাধ্যমিক ও একই পর্যায়ের ৩৯টি মাদ্রাসা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ অভিভাবক ও শিক্ষার্থী এই ঘোষণার খবর পায়নি। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।
সদরের ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বৈশাখী রানী জানায়, ‘বিদ্যালয় থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। সকাল ৯টায় এসে দেখি, ছুটি। এতে আমাদের বিপাকে পড়তে হয়।’
সপ্তম শ্রেণিতে পড়া মেয়েকে সকালে একই বিদ্যালয়ে নিয়ে এসে মা বনানী বিশ্বাস দেখেন ছুটি দেওয়া হয়েছে। পরে বাসায় ফিরতে হয়। ফেরার পথে বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘একটি সিদ্ধান্তে আসা দরকার। না হলে প্রতিদিন বিভ্রান্তিতে পড়তে হবে আমাদের। এত শীতের মধ্যে বিদ্যালয়ে এসে বন্ধ দেখলে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। দায়িত্বশীলদের কাছে অনুরোধ, ছুটি দেওয়া কিংবা না দেওয়ার একটি সিদ্ধান্তে থাকা দরকার।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ‘আগের দিনের আবহাওয়ার ভিত্তিতে ওই দিন রাতে পরদিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসছে আমাদের কাছে। তখন চিঠি পেলেও সমন্বয়হীনতার কারণে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। একদিন আগে ছুটির খবর সব বিদ্যালয়ে পৌঁছানোও যাচ্ছে না। তবু বুধবারের আবহাওয়ার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার জেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছুটি দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে আমার কাছে কোনও চিঠি না আসায় এদিন ওসব বিদ্যালয় খোলা ছিল। শনিবার জেলার তাপমাত্রা কেমন থাকবে, তার ভিত্তিতে রবিবার খোলা কিংবা বন্ধের সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
এদিকে, জেলার ৪৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান অব্যাহত ছিল বৃহস্পতিবার। সকালে একাধিক বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে দেখা গেছে।
ঝিনুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘শীতে বড়দেরই জবুথবু অবস্থা। এর মধ্যে শিশুদের বিদ্যালয় খোলা রেখে মাধ্যমিক বন্ধ রাখা হয়েছে। এগুলো কেমন সিদ্ধান্ত আমার বুঝে আসে না। সব বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একই সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত দায়িত্বশীলদের।’
আমরা বিদ্যালয় বন্ধের কোনও নির্দেশনা পাইনি বলে জানালেন ঝিনুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পারভীন আক্তার। তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের বিদ্যালয়ে পাঠদান অব্যাহত আছে। ছুটির বিষয়ে কোনও নির্দেশনা আসেনি। তবে আমাদের পাশের ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ছুটি ছিল।’
মাধ্যমিকে ছুটি দেওয়া হলেও প্রাথমিকে কেন দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধের ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে আসেনি। নির্দেশনা পেলে আমরা তা পালন করতাম। যেহেতু নির্দেশনা আসেনি, সেহেতু প্রাথমিক খোলা ছিল।’
আজকের আবহাওয়ার খবর জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গার আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে জেলায় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এটি আগামীকাল পর্যন্ত থাকতে পারে। বৃষ্টি থেমে গেলে তাপমাত্রা আরও কমবে। এরপর মাসের শেষ দিকে গিয়ে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে-কমতে পারে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) তাদের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নামলে স্কুল বন্ধ রাখা যাবে। মাউশির আঞ্চলিক উপপরিচালকরা সংশ্লিষ্ট জেলার শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ছুটির বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন।
পাশাপাশি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকের আদেশে বলা হয়, যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রমাণসহ) নেমে যাবে, সেসব জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শীতের তীব্রতা ও স্থানীয় বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিয়ে সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া যাবে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উপপরিচালকরা এই নির্দেশনা দিতে পারবেন। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তদূর্ধ্ব না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই আদেশ বলবৎ থাকবে।