Image default
বাংলাদেশ

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কায়সারকে তড়িঘড়ি করে দাফন

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে তড়িঘড়ি করে তার দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়। জানাজার নির্ধারিত সময়ের চার ঘণ্টা আগেই সকাল সাড়ে ৬টায় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ইটাখোলার সাহেব বাড়িতে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার (৭৭)। গত ৩ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় মাধবপুর এলাকায় মাইকিং করে জানানো হয়, সৈয়দ কায়সারের জানাজা শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। রাতেই কায়সারের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছায়।

এদিকে, মানবতাবিরোধী কায়সারের জানাজা ঠেকাতে মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শনিবার সকাল ৯টায় বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। 

এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের চার ঘণ্টা আগে অর্থাৎ সকাল সাড়ে ৬টায় তড়িঘড়ি করে মাধবপুর উপজেলার ইটাখোলা সাহেব বাড়িতে কায়সারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আত্মীয়-স্বজনসহ অল্প সংখ্যক এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা সৈয়দ সাঈদ উদ্দিনের কবরের পাশে দাফন করা হয়।

মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ কায়সারের জানাজা ঠেকাতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছি। পরে প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের আগেই ভোরে তার দাফনের ব্যবস্থা করেছে। এজন্য আমরা বিক্ষোভ মিছিল করিনি।

মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সৈয়দ কায়সারের জানাজা ঠেকাতে মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করার ব্যাপারটি আমার জানা ছিল না। পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই সৈয়দ কায়সারের জানাজা হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সৈয়দ কায়সার ১৯৪০ সালের ১৯ জুন মাধবপুর উপজেলার ইটাখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ সাঈদ উদ্দিন ও মায়ের নাম বেগম হামিদা বানু। তিনি আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান মুসলিম লীগের সিলেট জেলা শাখার সদস্য ছিলেন কায়সার। ১৯৭০ সালের পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিলেট-১৭ (বর্তমান হবিগঞ্জ-৪) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি হন।

১৯৮২ সালে শাহ আজিজুর রহমান অংশের বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব নির্বাচিত হন কায়সার। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে চতুর্থ সংসদে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এরশাদের মন্ত্রিসভায় কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।
 
মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মতো অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সৈয়দ কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ে সাতটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড, চারটিতে যাবজ্জীবন ও তিনটিতে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সৈয়দ কায়সারকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও বহাল থাকে। একই বছরের ২২ অক্টোবর কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়। মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর আপিল বিভাগের রায় রিভিউয়ের আবেদন করেন তিনি। মোট ১৮টি যুক্তিতে রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আপিল করেন। বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় তাকে জামিন দেওয়া হলেও ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার দিন তাকে কারাগারের কনডেম সেলে পাঠানো হয়।

Source link

Related posts

নিজেদের দুর্বলতা ভুলে বসন্ত বরণে মেতেছিল তারা 

News Desk

বৃহস্পতিবার থেকে খোলা থাকবে নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান

News Desk

এক জেলের জালে ধরা পড়লো ৯৬ মণ ইলিশ, ৪০ লাখে বিক্রি

News Desk

Leave a Comment