Image default
বাংলাদেশ

মাস্ক এখন ‘উটকো’ ঝামেলা

কিছুদিন স্তিমিত থাকার পর দেশে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। দেশের ৩২ জেলায় ভাইরাসটির সংক্রমণ এখন ঊর্ধ্বমুখী। মূলত সারাদেশই এখন ফের করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে। অথচ এমন অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে নাগরিকদের মধ্যে অনীহা দেখা গেছে। মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করছে মানুষ। যাদের কাছে আছে তারা অধিকাংশই সঠিকভাবে পরেননি। কেউ নাকের নিচে নামিয়ে রেখেছেন, কারও মাস্ক এসে ঠেকেছে থুতনিতে। অনেকে আবার মাস্ক পকেটে রেখেই ঘুরছেন।

সোমবার (৭ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের উল্টো পাশের ফুটপাতে বসে বেচা-কেনা করছিলেন কয়েকজন হকার। মুখে মাস্ক না থাকার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘মাস্ক মুখে থাকলে ক্রেতাদের সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলা যায় না। খাজা আলিম নামের এক ফল বিক্রেতা বলেন, ‘মাস্ক সব সময়ই পরি। কেনা-বেচার সময় একটু খুলতে হয় নইলে কাস্টমার দাম শোনে না।

পল্টন ও গুলিস্তান ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটগুলোর কোনো দোকানেই নেই সামাজিক দূরত্ব। অনেক ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে নেই মাস্ক। গণপরিবহন, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল থেকে শুরু করে অফিসে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ কেবলই কাগজে-কলমে। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে একেকজন দিচ্ছেন একেক ধরনের অজুহাত। শিকড় পরিবহনের একটি বাসে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিলেন নাইম নামে এক লেদ মিস্ত্রি। তার মুখেও মাস্ক ছিল না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন তো করোনা নাই। মাস্ক খালি খালি গলায় ঝুলিয়ে রাখতে অস্বস্তি লাগে।

করোনার সংক্রমণ যখন বেশি ছিল, তখন নিয়মিত মাস্ক পরেছেন বলে জানান এই তরুণ। এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে এ খামখেয়ালিপনার চরম মূল্য দিতে হতে পারে উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

জাগো নিউজকে তিনি আরও বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে আমরা একটা জটিল অবস্থায় উপনীত হয়েছি। আগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুরের মতো বড় জেলায় করোনার প্রাদুর্ভাব বেশি ছিল। কিন্তু এখন সংক্রমণ সীমান্তবর্তী জেলা থেকে ক্রমশ কেন্দ্রের দিকে ধেয়ে আসছে। ডেল্টা বা ইন্ডিয়ান ভেরিয়েন্ট প্রতিরোধে দুটি অস্ত্র আছে। প্রাথমিক অস্ত্র হচ্ছে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানা।

চূড়ান্ত অস্ত্র হচ্ছে ভ্যাকসিন। যেহেতু আমাদের ভ্যাকসিন পেতে বিলম্ব হচ্ছে। সেহেতু প্রাথমিক যে উপায় মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানা সেটার ওপরই নির্ভরশীল হতে হবে। যদি আমরা প্রাথমিক উপায় না মেনে চলি তাহলে সংক্রমণটা ছড়িয়ে যাবে। ফলে আবারও মানবিক বিপর্যয়ের একটা অবস্থা তৈরি হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।

মাস্ক পরার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উৎসাহ দিতে হবে। অন্যদিকে মাস্ক পরাতে সবাইকে বাধ্য করতে হবে। পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় গণতদারকি কমিটি করতে হবে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা তৈরি না হওয়া প্রসঙ্গে ডা. লেলিন বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারি করে মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। এসব কাজে মানুষের আচরণগত পরিবর্তন করতে হয়। সেখানে উদ্বুদ্ধ করতে হয়, বাধ্য করতে হয়। কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট বা জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হয়। এ জায়গায় আমাদের দুর্বলতা আছে। সম্পৃক্ততার অভাবে আমরা মাস্কে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারিনি।

এদিকে, করোনা নিয়ে টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা বলছেন, এখন নিয়ম মানাটাই আত্মরক্ষার বড় কৌশল। যদিও অনেকের মধ্যে সেই সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে হরহামেশাই। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখন নিয়ম মেনে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে। এজন্য আমরা একে একে সবকিছু খুলে দিতে চেষ্টা করছি। সেই নিয়ম না মানার কারণে যদি সংক্রমণ বাড়তে থাকে তবে আবারও সব বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো।

Related posts

‘কখনও সনদ নেওয়ার কথা মাথায় আসেনি’

News Desk

গজারিয়ায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ৪ জনের কারাদণ্ড

News Desk

২৩ কৃতী শিক্ষার্থীকে ভ্রমণ করানো হলো হেলিকপ্টারে

News Desk

Leave a Comment